বাক্যের শব্দগুলোর নির্দিষ্ট বিন্যাস থাকে। বিন্যাসই সমগ্র বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করে দেয়। দেখা যায়, বাক্যের যথাযথ অর্থ জ্ঞাপনের জন্য বাক্যস্থিত নাম শব্দগুলোর সঙ্গে কখনো কখনো বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে থাকে। এই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টির নাম বিভক্তি।
বাংলা বাক্যের পদগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কারক নির্দেশের জন্য এই বিভক্তিগুলোর সবিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অনেক সময় বিভক্তির প্রয়োজন পড়ে না। বিভক্তি না থাকলে শূন্য বিভক্তি (০) ধরে নিতে হয়। যেমন :
সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠেছে।
এই বাক্যে তিনটি নাম শব্দ আছে - সন্ধ্যা, আকাশ, চাঁদ। আর ‘উঠেছে’ হলো ক্রিয়াপদ। সমগ্র বাক্যটির অর্থগ্রাহ্যতার জন্য 'সন্ধ্যা' শব্দের সঙ্গে 'য়', 'আকাশ' শব্দের সঙ্গে 'এ' যুক্ত হয়েছে। 'য়', 'এ' হলো বিভক্তি। চাঁদ-এর সঙ্গে কোনো বর্ণ যুক্ত হয়নি প্রয়োজন নেই বলে। কিন্তু ব্যাকরণমতে, সেখানেও বিভক্তি আছে, তবে তা শূন্য (০) বিভক্তি। শূন্য (০) বিভক্তিকে অ-বিভক্তিও বলা হয়। সমগ্র বাক্যটির বিন্যাস এই রকম:
সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠেছে।
সন্ধ্যা+য় আকাশ+এ চাঁদ+০ উঠেছে।
এই বাক্যের বিভক্ত অংশগুলোই (য, এ, ০) বিভক্তি।
"অথবা আমরা বলতে পারি, যে সব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বা চিহ্ন দ্বারা বাক্যের এক পদের সঙ্গে অন্য পদের সম্বন্ধ নির্ধারিত হয়, তাকে বলা বিভক্তি।"
অথবা বাক্যে ব্যবহৃত যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বাক্যের অর্থগ্রাহ্যতায় সাহায্য করে, তাদের বিভক্তি বলা হয়।
ধাতু বা ক্রিয়াপদের সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয়, তাদেরকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে।
যেমন: তিনি বাড়ি যাবেন (যা +ইবেন = যাইবেন / যা +বেন = যাবেন)।
শব্দ বা নাম পদের সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয়, তাদেরকে শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি বলে।
যেমন: ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। (ভিক্ষুক + কে)
বাংলায় সাত রকম শব্দ বা কারক বিভক্তি ব্যবহৃত হয়- প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী এবং সপ্তমী।
আরও পড়ুন :- বচন কাকে বলে?
আমি ব্যাকরণ পড়িতেছি। (পড় +ইতেছি)। 'পড়িতেছি' ক্রিয়াপদটিতে 'পড়' একটি ধাতু। এই ধাতুর সঙ্গে ‘ইতেছি' বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
পাগল কিনা বলে। এই বাক্যে ব্যবহৃত 'পাগল' (পাগল+অ) শব্দে 'অ' বিভক্তি হয়েছে; যেহেতু 'অ' দৃশ্যমান নয়, তাই একে শূন্য-বিভক্তি বলা হয়েছে।
১. অপ্রানী বা ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে 'রা' যুক্ত হয় না। গুলি, গুলো যুক্ত হয় যেমন-পাথরগুলো, গরুগুলো।
২. অপ্রাণিবাচক শব্দের উত্তর ‘কে’ বা ‘রে' বিভক্তি হয় না, শূন্য বিভক্তি হয়। যথা- কলম দাও।
৩. স্বরাস্ত শব্দের উত্তর 'এ' বিভক্তির রূপ হয় 'য়' বা 'যে'। 'এ' স্থানে 'তে' বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে।
যেমন – মা+এ = মায়ে, ঘোড়া + এ = ঘোড়ায়।
৪. অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনায় শব্দের উত্তর প্রায়ই 'রা' স্থানে ‘এরা' হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির 'র' স্থানে 'এর' যুক্ত হয়।
যেমন - লোক+রা = লোকেরা, মানুষ+এর = মানুষের। লোক + এর লোকের।
কিন্তু অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর এক বচনে সাধারণ 'র' যুক্ত হয়, 'এর' যুক্ত হয় না। যেমন- মামার, ছেলের।
মাঠে মাঠে অজস্র ফসল। ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো নদীতে ভাসমান।
এ জাতীয় ক্রিয়াহীন অনেক বাক্য বাংলায় রয়েছে। ক্রিয়া নেই বলে এই বাক্যগুলোর অন্তর্গত নাম শব্দগুলোর কারকও নেই। সে জন্য বলা হয় বাংলা বাক্য কারক প্রধান নয়।
কিন্তু বিভক্তি ছাড়া বাংলা বাক্য ঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না এবং বাক্যও অর্থগ্রাহ্য হয় না। ওপরের দুটি বাক্যের বিভক্তি তুলে নিলে বাক্যগুলো যথাযথ অর্থ প্রকাশ করবে না।
মাঠ মাঠ অজস্র ফসল' কিংবা 'ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নদী ভাসমান' বাক্য হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ।
প্রথম বাক্যে 'এ' বিভক্তি (মাঠ+এ), দ্বিতীয় বাক্যে 'তে' বিভক্তি (নদী+তে) বাক্য দুটির বিন্যাস ও অর্থ ঠিক করে দিয়েছে।
গাছের পাতায় রাতের শিশির লেগে আছে' –এই বাক্যেও আমরা দেখছি এর বিভক্তি [গাছ+এর, রাত+এর] ও 'য়' বিভক্তি [পাতা+য়] বাক্যটিকে সম্পূর্ণ অর্থগ্রাহ্য করেছে। নতুবা 'গাছ পাতা রাত শিশির' কোনো বাক্য নয়।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বিভক্তি বাক্যের অন্তর্গত শব্দ অর্থাৎ পদগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং বাক্যের অর্থ নির্দিষ্ট করে। সে জন্য বাংলা বাক্য বিভক্তি প্রধান। এর থেকে বাংলা বাক্যে বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা যায়।
অবশ্য সব সময় বিভক্তি দিয়ে বাংলা ভাষা ভাব প্রকাশ করতে পারে না, সেসব ক্ষেত্রে বিভক্তির স্থানে বিভক্তি-স্থানীয় কিছু শব্দ যেমন 'খারা', ‘দিয়ে', 'কর্তৃক', 'হতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে' ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
বাংলা বাক্যের পদগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কারক নির্দেশের জন্য এই বিভক্তিগুলোর সবিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অনেক সময় বিভক্তির প্রয়োজন পড়ে না। বিভক্তি না থাকলে শূন্য বিভক্তি (০) ধরে নিতে হয়। যেমন :
সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠেছে।
এই বাক্যে তিনটি নাম শব্দ আছে - সন্ধ্যা, আকাশ, চাঁদ। আর ‘উঠেছে’ হলো ক্রিয়াপদ। সমগ্র বাক্যটির অর্থগ্রাহ্যতার জন্য 'সন্ধ্যা' শব্দের সঙ্গে 'য়', 'আকাশ' শব্দের সঙ্গে 'এ' যুক্ত হয়েছে। 'য়', 'এ' হলো বিভক্তি। চাঁদ-এর সঙ্গে কোনো বর্ণ যুক্ত হয়নি প্রয়োজন নেই বলে। কিন্তু ব্যাকরণমতে, সেখানেও বিভক্তি আছে, তবে তা শূন্য (০) বিভক্তি। শূন্য (০) বিভক্তিকে অ-বিভক্তিও বলা হয়। সমগ্র বাক্যটির বিন্যাস এই রকম:
সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠেছে।
সন্ধ্যা+য় আকাশ+এ চাঁদ+০ উঠেছে।
এই বাক্যের বিভক্ত অংশগুলোই (য, এ, ০) বিভক্তি।
আরও পড়ুন :- উক্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও?
বিভক্তির সংজ্ঞা বা কাকে বলে :-
এককথায় বিভক্তি কাকে বলে এর উত্তরে বলা যায়, শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলেই তাকে বলা হয় বিভক্তি।"অথবা আমরা বলতে পারি, যে সব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বা চিহ্ন দ্বারা বাক্যের এক পদের সঙ্গে অন্য পদের সম্বন্ধ নির্ধারিত হয়, তাকে বলা বিভক্তি।"
অথবা বাক্যে ব্যবহৃত যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বাক্যের অর্থগ্রাহ্যতায় সাহায্য করে, তাদের বিভক্তি বলা হয়।
বিভক্তির কত প্রকার ও কি কি :-
বাংলা বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তি দুই প্রকার। যথা-- ক্রিয়া বিভক্তি এবং
- শব্দ বিভক্তি বা কারক বিভক্তি বা নাম বিভক্তি।
বিভিন্ন প্রকার বিভক্তির সংজ্ঞা :-
ক্রিয়া বিভক্তি কাকে বলে :-
ধাতু বা ক্রিয়াপদের সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয়, তাদেরকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে।
যেমন: তিনি বাড়ি যাবেন (যা +ইবেন = যাইবেন / যা +বেন = যাবেন)।
শব্দ বিভক্তি বা কারক বিভক্তি কাকে বলে :-
নাম পদের সঙ্গে বা বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের সঙ্গে যেসব বিভক্তি যোগ করা হয় তাকে বলা হয় শব্দ বিভক্তি বা কারক বিভক্তি।শব্দ বা নাম পদের সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয়, তাদেরকে শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি বলে।
যেমন: ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। (ভিক্ষুক + কে)
বাংলায় সাত রকম শব্দ বা কারক বিভক্তি ব্যবহৃত হয়- প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী এবং সপ্তমী।
আরও পড়ুন :- বচন কাকে বলে?
ধাতু-বিভক্তি কাকে বলে :-
ধাতুর সঙ্গে যে সমস্ত বিভক্তি যুক্ত হয়, তাদের ধাতু-বিভক্তি বলে। যেমন :আমি ব্যাকরণ পড়িতেছি। (পড় +ইতেছি)। 'পড়িতেছি' ক্রিয়াপদটিতে 'পড়' একটি ধাতু। এই ধাতুর সঙ্গে ‘ইতেছি' বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
শূন্য বিভক্তি কাকে বলে :-
যে বিভক্তি অদৃশ্য থেকে শব্দকে পদে পরিণত করে, সেই জাতীয় বিভক্তিকে শূন্য বিভক্তি বলে। যেমন :পাগল কিনা বলে। এই বাক্যে ব্যবহৃত 'পাগল' (পাগল+অ) শব্দে 'অ' বিভক্তি হয়েছে; যেহেতু 'অ' দৃশ্যমান নয়, তাই একে শূন্য-বিভক্তি বলা হয়েছে।
বিভক্তি যোগের নিয়ম :-
বিভক্তি ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে এখন আলোচনা করব -১. অপ্রানী বা ইতর প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে 'রা' যুক্ত হয় না। গুলি, গুলো যুক্ত হয় যেমন-পাথরগুলো, গরুগুলো।
২. অপ্রাণিবাচক শব্দের উত্তর ‘কে’ বা ‘রে' বিভক্তি হয় না, শূন্য বিভক্তি হয়। যথা- কলম দাও।
৩. স্বরাস্ত শব্দের উত্তর 'এ' বিভক্তির রূপ হয় 'য়' বা 'যে'। 'এ' স্থানে 'তে' বিভক্তিও যুক্ত হতে পারে।
যেমন – মা+এ = মায়ে, ঘোড়া + এ = ঘোড়ায়।
৪. অ-কারান্ত ও ব্যঞ্জনায় শব্দের উত্তর প্রায়ই 'রা' স্থানে ‘এরা' হয় এবং ষষ্ঠী বিভক্তির 'র' স্থানে 'এর' যুক্ত হয়।
যেমন - লোক+রা = লোকেরা, মানুষ+এর = মানুষের। লোক + এর লোকের।
কিন্তু অ-কারান্ত, আ-কারান্ত এবং এ-কারান্ত খাঁটি বাংলা শব্দের ষষ্ঠীর এক বচনে সাধারণ 'র' যুক্ত হয়, 'এর' যুক্ত হয় না। যেমন- মামার, ছেলের।
বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা :-
বাংলায় এমন অনেক বাক্য রয়েছে, যেগুলোতে ক্রিয়াপদ নেই। যেমন :মাঠে মাঠে অজস্র ফসল। ছোট ছোট ডিঙি নৌকাগুলো নদীতে ভাসমান।
এ জাতীয় ক্রিয়াহীন অনেক বাক্য বাংলায় রয়েছে। ক্রিয়া নেই বলে এই বাক্যগুলোর অন্তর্গত নাম শব্দগুলোর কারকও নেই। সে জন্য বলা হয় বাংলা বাক্য কারক প্রধান নয়।
কিন্তু বিভক্তি ছাড়া বাংলা বাক্য ঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না এবং বাক্যও অর্থগ্রাহ্য হয় না। ওপরের দুটি বাক্যের বিভক্তি তুলে নিলে বাক্যগুলো যথাযথ অর্থ প্রকাশ করবে না।
মাঠ মাঠ অজস্র ফসল' কিংবা 'ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নদী ভাসমান' বাক্য হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ।
প্রথম বাক্যে 'এ' বিভক্তি (মাঠ+এ), দ্বিতীয় বাক্যে 'তে' বিভক্তি (নদী+তে) বাক্য দুটির বিন্যাস ও অর্থ ঠিক করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন :- কারক কাকে বলে?
গাছের পাতায় রাতের শিশির লেগে আছে' –এই বাক্যেও আমরা দেখছি এর বিভক্তি [গাছ+এর, রাত+এর] ও 'য়' বিভক্তি [পাতা+য়] বাক্যটিকে সম্পূর্ণ অর্থগ্রাহ্য করেছে। নতুবা 'গাছ পাতা রাত শিশির' কোনো বাক্য নয়।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে, বিভক্তি বাক্যের অন্তর্গত শব্দ অর্থাৎ পদগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং বাক্যের অর্থ নির্দিষ্ট করে। সে জন্য বাংলা বাক্য বিভক্তি প্রধান। এর থেকে বাংলা বাক্যে বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা যায়।
অবশ্য সব সময় বিভক্তি দিয়ে বাংলা ভাষা ভাব প্রকাশ করতে পারে না, সেসব ক্ষেত্রে বিভক্তির স্থানে বিভক্তি-স্থানীয় কিছু শব্দ যেমন 'খারা', ‘দিয়ে', 'কর্তৃক', 'হতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে' ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.