অকারক পদ কাকে বলে? সম্বন্ধ পদ কাকে বলে?

আমরা জেনেছি বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক তা-ই হল কারক সম্পর্ক। এখন দেখবার বিষয় এই যে, বাক্যে যেসব নামপদ ব্যবহৃত হয়, তার সবকটিই কি ক্রিয়াপদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্কে যুক্ত থাকে? যদি না থাকে, তাহলে তাদের কী বলব?

যেমন—আমি হাঁসের ডিম খেয়েছি।

এই বাক্যের কারক সম্পর্ক সাজালে পাব —

উপরের উদাহরণটিতে দেখো 'হাঁসের' নামপদ হওয়া সত্ত্বেও ক্রিয়ার সঙ্গে এর কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। অথচ কর্মকারক 'ডিম'-কে যদি প্রশ্ন করি, 'কীসের ডিম?' তবে উত্তর পাওয়া যাবে—'হাসে'র।

তাহলে বলা যায়, ক্রিয়াপদ 'খেয়েছি'-এর সঙ্গে 'হাঁসের' সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও নামপদ 'ডিম' এর সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক আছে। দুটি নামপদের এই সম্পর্ককেই বলা হয় অকারক সম্পর্ক।

অকারক কাকে বলে :-

বাক্যে যত নামপদ থাকে, তাদের অধিকাংশই হয় ক্রিয়ার সঙ্গে না হয় অন্য নামপদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদের সম্পর্কের নাম 'কারক' আর একটি নামপদের সঙ্গে অন্য নামপদের সম্পর্কের নাম অ-কারক।

অ কারক কত প্রকার ও কি কি :-

বাংলা বাক্যে দু-ধরনের অকারক সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। এদের বলা হয়

১ - সম্বন্ধ পদ এবং

২ - সম্বোধন পদ।

সম্বন্ধ পদ কাকে বলে :-

বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে যে এক বা একাধিক নামপদের কোনো প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ থাকে না, অথচ বাক্যের অন্য কোনো নামপদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, তাকে বা তাদের বলা হয় সম্বন্ধ পদ


যেমন - রহিমার খাতাটি এখানে রাখো। ক্রিয়ার সঙ্গে এই পদের কোনো সম্পর্ক থাকে না বলেই এটি কারক পদবাচ্য নয়।

এই উদাহরণে নামপদ ‘রহিমার' সঙ্গে ‘রাখো' ক্রিয়ার কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক না থাকলেও অন্য নামপদ ‘খাতাটি’র একটা সম্পর্ক আছে। তাই ‘রহিমার' পদটি এখানে সম্বন্ধ পদ।

তবে একথা বলাই যায় বাক্যে অবস্থিত কোনো সম্বন্ধ পদের সঙ্গে ক্রিয়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক না থাকলেও পরোক্ষ সম্পর্ক থাকে।

বাক্যের কারক সম্পর্কসূচক নামপদটিকে 'কার', 'কীসের' ইত্যাদি প্রশ্ন করলে সম্বন্ধ পদটি পাওয়া যায়। যেমন—

আমি সমীরের মামাকে দেখেছি।

এই বাক্যে কর্মকারক ‘মামাকে' 'কার' দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যাবে 'সমীরের'। তাই সমীরের' হল সম্বন্ধ পদ।

‘সমীরের' এই সম্বন্ধ পদটি বাক্যের কর্মকারকের সম্বন্ধে সম্পর্কিত, তাই একে কর্মসম্বন্ধ পদও বলা যেতে পারে।
সম্বন্ধ ও সম্বোধন পদ কাকে বলে? সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদের পার্থক্য?

সম্বন্ধ পদের প্রকারভেদ :-

বাংলায় যতগুলি কারক আছে তাদের প্রতিটি সম্পর্কেই সম্বন্ধ পদের প্রয়োগ আছে। তাই ছয়টি কারক অনুযায়ী সম্বন্ধ পদও ছয় রকমের। যথা -

1] কর্তৃসমৃদ্ধ পদ :

কর্তৃকারকের সম্বন্ধে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই কর্তৃসম্বন্ধে পদ বলা হয়। উদাহরণ -

মনিরের বাবা খুব ভালো ছবি আঁকেন। শিক্ষকের উপদেশ ছাত্রদের মেনে চলা উচিত।

২] কর্মসম্বন্ধ পদ:

কর্মকারকের সম্বন্ধে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই কর্মসম্বন্ধ পদ বলা হয়। উদাহরণ -

তিনি আর্ভের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। তারপর তাঁরা শাস্ত্রের আলোচনায় রত হলেন।

৩] করণসম্বন্ধ পদ:

বাক্যের করণকারকের সম্বন্ধে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই করণসম্বন্ধ পদ বলা হয়। উদাহরণ -

বড়োবাবুর এক কলমের খোঁচায় তার চাকরিটা গেল। তাঁর তুলির টান অসামান্য।


৪] নিমিত্তসম্বন্ধ পদ :

নিমিত্তকারক সম্বন্ধে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই নিমিত্তসম্বন্ধ পদ বলা হয়। উদাহরণ -

পুজোর জামাকাপড় এখনও কেনা হয়নি। এক গেলাস খাবার জল দাওতো।

৫] অপাদানসম্বন্ধ পদ:

বাক্যের অপাদানকারক সম্বন্ধে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকেই অপাদানসম্বন্ধ পদ বলা হয়। উদাহরণ -

যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। এবারের পুজোসংখ্যায় আমার লেখার বিরাম নেই।

৬] অধিকরণসম্বন্ধ পদ :

বাক্যের অধিকরণ কারক সম্বন্ধে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকেই অধিকরণসম্বন্ধ পদ বলা হয়। উদাহরণ -

খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে। সুরেশবাবু হলেন ইংরেজির এমএ।

সম্বোধন পদ কাকে বলে :-

‘সম্বোধন' কথাটির অর্থ হল বিশেষভাবে ডাকা। বিভক্তিহীন বা বিভক্তিযুক্ত যেসব নামপদের দ্বারা কারোর কাছে আবেদন বা কাউকে আহ্বান বা সম্বোধন করা বোঝায়, তাদের সম্বোধন পদ বলে।

সম্বোধন পদ সাধারণত বাক্যের প্রথমে বসে, কখনো কখনো পরেও বসে। আর এই পদ দ্বারা কখনও কর্তাকে, কখনও গৌণ কর্মকে, আবার কখনও করণবাচক ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয়। বাংলা বাক্যে সম্বোধন পদকে পরিস্ফুট করার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অব্যয় পদের সাহায্য নেওয়া হয়। যেমন

ও মা, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না? হে মাধবী, দ্বিধা কেন??

প্রথম বাক্যের 'ও' এবং দ্বিতীয় বাক্যের 'হে' হল সম্বোধনসূচক অব্যয়।

সম্বোধন পদের গঠন :-

১. অনেক সময় সম্বোধন পদের পূর্বে হে, ওগো, ওরে, ওহে ও ইত্যাদি অব্যয়বাচক শব্দ বসে সম্বোধনের সূচনা করা হয়। যেমন- 'ওরে আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।

 
২. অনেক সময় শুধু সম্বোধনসূচক অব্যয়টি কেবল সম্বোধন পদের কাজ করে থাকে। যেমন- ওগো শুনছ।

৩. সম্বোধন পদের পরে অনেক সময় বিস্ময়সূচক চিহ্ন দেওয়া হয়। এই ধরনের বিস্ময়সূচক চিহ্নকে সম্বোধন চিহ্নও বলা হয়ে থাকে। যেমন— বৎস! প্রস্থান করো।

কিন্তু আধুনিক বাংলায় সম্বোধন চিহ্নের স্থানে কমা (,) চিহ্নের প্রয়োগই বেশি হয়। যেমন- ও মেয়ে, শুনে যাও।

সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদের পার্থক্য :-

সম্বন্ধ পদ
পরবর্তী বিশেষ্য বা সর্বনামের সঙ্গে পূর্ববর্তী সম্বন্ধ পদের একটা সম্পর্ক থাকে।

সম্বন্ধ পদটি সম্পর্কযুক্ত বিশেষ্য বা সর্বনামের আগে বসে।

সম্বন্ধ পদে বিভক্তি চিহ্ন সাধারণত লোপ পায় না।

সম্বোধন

বাক্যের কোনো পদের সঙ্গেই সম্বোধন পদের সম্পর্ক থাকে না।

সম্বোধন পদটি বাক্যের যে-কোনো জায়গায় বসে।

আধুনিক বাংলা ভাষায় সম্বোধন পদ সাধারণভাবে বিভক্তি শূন্য থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ