কারক কাকে বলে :-
বাংলা ব্যাকরণে 'কারক' একটি সুপরিচিত প্রসঙ্গ। 'কারক' শব্দটির অর্থ, যে কোনো কাজ বা ক্রিয়া সম্পাদন করে। বাক্যে কর্তাই ক্রিয়া সম্পাদন করে। সুতরাং কর্তাই কারক এ রকম মনে হতে পারে।কিন্তু ব্যাকরণে শুধু কর্তাই কারক নয়। কর্তা কী করছে, কার সাহায্যে করছে, কোথায় করছে অর্থাৎ ক্রিয়া সম্পাদনের অবলম্বন, উপকরণ, হেতু, স্থান, কাল ইত্যাদি সবকিছুই এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য। ক্রিয়া সম্পাদনে ক্রিয়ার সঙ্গে ঐ সব ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, কাল ইত্যাদির যে সম্পর্ক রয়েছে, ব্যাকরণে তা কারক নামে অভিহিত।
‘কারক’ শব্দটি ভাঙ্গলে পাওয়া যায় কৃ + ণক (অক), এখানে 'কৃ' ধাতুর অর্থ হলো করা এবং 'ণক' বা 'অক' এর অর্থ হলো সম্পাদন। অতএব কারকের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো- যা ক্রিয়া সম্পদান করে। বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্ককে বলা হয় কারক।
বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদের সাথে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক, তাকেই বলা হয় কারক।
যেমন - জয়িতা বই পড়ে। এ বাক্যে ক্রিয়াপদ হলো ‘পড়ে'।
আরও পড়ুন :- বিভক্তি কাকে বলে?
এই ক্রিয়াপদের সঙ্গে জয়িতার একটি সম্পর্ক রয়েছে। কারণ জয়িতা একটি নামপদ।
কারকের প্রকারভেদ বা শ্রেনীবিভাগ :-
বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের ছয় প্রকারের সম্পর্ক হয়ে থাকে ভিত্তিতে কারক ছয় প্রকার। যেমন:১. কর্তৃকারক,
২. কর্মকারক,
৩. করণ কারক,
৪. সম্প্রদান কারক,
৫. অপাদান কারক ও
৬. অধিকরণ কারক
নীচে একটি উদাহরণের সাহায্যে এই সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেখানো হলো -
‘ মহারাজ সুব্রত প্রত্যহ সকালে রাজকোষ হতে স্বহস্তে দরিদ্রদেরকে ধন দান করতেন।'
১. কে দান করতেন ? সুব্রত (কর্তৃকারক)
২. কী দান করতেন? ধন (কর্মকারক)
৩. কী দ্বারা দান করতেন? স্বহস্তে (করণ কারক)
৪. কাদের দান করতেন? দরিদ্রদের (সম্প্রদান কারক)
৫. কোথা হতে দান করতেন? রাজকোষ হতে (অপাদান কারক)
৬. কখন দান করতেন? প্রত্যহ সকালে (অধিকরণ কারক)
বিভিন্ন প্রকার কারকের সংজ্ঞা :-
কর্তৃকারক কাকে বলে :-
বাক্যে যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে বলা হয় কর্তা এবং এই কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক তাকে বলা হয় কর্তৃকারক।যেমন -
‘উপমা পড়ছে' এই বাক্যে উপমা হল কর্তা।
ক্রিয়াকে 'কে' বা 'কারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্তৃকারক। সাগর দৌড়াচ্ছে। কে দৌড়াচ্ছে? সাগর। সুতরাং 'সাগর' কর্তৃকারক। তারা হাটছে। কারা হাটছে? তারা। "তারা" কর্তৃকারক।
আরও পড়ুন :- বাক্য কাকে বলে?
কর্মকারক কাকে বলে :-
কর্তা যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকেই বলা হয় কর্মকারক।ক্রিয়াকে 'কি' বা 'কাকে' জিজ্ঞেস করে যে উত্তর পাওয়া যায় তা কর্ম এবং ক্রিয়া পদের সঙ্গে কর্মের সম্বন্ধই কর্মকারক। যেমন -
সে ফল কিনছে । সে কী কিনছে? ফল। সুতরাং ফল কর্মকারক।
রাজু রীতাকে মারছে। রাজু কাকে মারছে? রীতাকে। রীতা কর্মকারক।
করণ কারক কাকে বলে :-
যার দ্বারা বা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে করণ কারক বলে।'করণ' শব্দের অর্থ উপায় বা সহায়। বাক্যের ক্রিয়াপদকে 'কার দ্বারা বা কী উপায়ে জিজ্ঞাসা করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তা-ই করণ কারক। যেমন -
নীলু ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। নীলু কী দিয়ে ঘর সাজায়? ফুল দিয়ে সুতরাং 'ফুল' করণ কারক।
কাঠুরে কুড়াল দ্বারা গাছ কাটে। কাঠুরে কী দ্বারা গাছ কাটে? কুড়াল দ্বারা। 'কুড়াল' করণ কারক।
আরও পড়ুন :- কর্তৃকারক কাকে বলে?
সম্প্রদান কারক কাকে বলে :-
যার জন্য বা যার উদ্দেশে স্বত্ব ত্যাগ করে কিছু দেওয়া যায় তাকে সম্প্রদান কারক বলে। যেমন -গরীবের মেয়েটিকে ভাত দাও। এই বাক্যে গরীবের মেয়েটিকে সম্প্রদান কারক।
আধুনিক ব্যাকরণবিদেরা সম্প্রদান কারক স্বীকার করতে চান না। তাঁদের মতে এটি কর্মকারকের অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। তবু প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণে সম্প্রদান কারক আছে।
অপাদান কারক কাকে বলে :-
যা থেকে বা যা হতে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় এবং ক্রিয়ার বিচিত্র ভাবের প্রকাশ ঘটে তাকে অপাদান কারক বলে। যেমন -শায়েলী সেদিন বাড়ি থেকে কলেজ গিয়েছিল। এ বাক্যে 'যাওয়া' ক্রিয়া সম্পাদিত হয়েছিল বাড়ি থেকে।
আম হতে গুড় হয়। এই বাক্যে গুড় হওয়ার কাজটি সম্পন্ন হয় 'আখ' হতে।
সুতরাং 'বাড়ি' ও 'আখ' অপাদান কারক।
অধিকরণ কারক কাকে বলে :-
যে 'সময়' বা 'স্থান' কে আশ্রয় করে কর্তা তার কর্ম সম্পন্ন বা সম্পাদন করে সেই সময় বা স্থানকে অধিকরণ কারক বলে।
অধিকরণ কারকে সর্বদা সপ্তমী বিভক্তি ব্যবহৃত হয়।
যেমন:
১. দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রার্থী, ভিক্ষা দেও তারে।
২. নদীতে নৌকা বাঁধা।
৩. বসন্তে কোকিল ডাকে।
এখানে যদি প্রশ্ন করা যায় প্রাণী কোথায় দাঁড়িয়ে তাহলে উত্তর আসে দুয়ারে। আর দুয়ারে একটি স্থান। আবার যদি বলা যায় কোকিল কখন ডাকে তাহলে উত্তর পাওয়া যায় বসন্তে। আর 'বসন্ত' সময় নির্দেশ করে।
অধিকরণ কারকে সর্বদা সপ্তমী বিভক্তি ব্যবহৃত হয়।
যেমন:
১. দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রার্থী, ভিক্ষা দেও তারে।
২. নদীতে নৌকা বাঁধা।
৩. বসন্তে কোকিল ডাকে।
এখানে যদি প্রশ্ন করা যায় প্রাণী কোথায় দাঁড়িয়ে তাহলে উত্তর আসে দুয়ারে। আর দুয়ারে একটি স্থান। আবার যদি বলা যায় কোকিল কখন ডাকে তাহলে উত্তর পাওয়া যায় বসন্তে। আর 'বসন্ত' সময় নির্দেশ করে।
আরও পড়ুন :- কর্মকারক কাকে বলে?
কারক নির্ণয়ের প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি :-
১. ক্রিয়াকে 'কে' দ্বারা প্রশ্নের যে উত্তর পাওয়া যাবে তাই কর্তৃকারক।
২. ক্রিয়াকে 'কী' বা 'কাকে' দ্বারা প্রশ্নের উত্তরে মা পাওয়া যাবে তাই কর্মকারক।
৩. ক্রিয়াকে 'কী দ্বারা প্রশ্নের যে উত্তর পাওয়া যাবে তা করণ কারক।
৪. ক্রিয়াকে 'কাকে' (স্বত্ত্বত্যাগ করে প্রদান) দ্বারা প্রশ্নের উত্তরে যা পাওয়া যাবে তা সম্প্রদান কারক।
৫. ক্রিয়াকে 'কোথা হতে' প্রশ্নের উত্তরে যা পাওয়া যাবে তা অপাদান কারক।
৬. ক্রিয়াকে ‘কোথায়', 'কখন' দ্বারা প্রশ্নের উত্তরে যা পাওয়া যাবে তাই অধিকরণ কারক।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.