বচন কি বা কাকে বলে :-
'বচন’ ব্যাকরণের একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ সংখ্যার ধারণা। অর্থাৎ ব্যাকরণে বচন অর্থ সংখ্যার ধারণা।তাই, যে শব্দ দিয়ে ব্যাকরণে কোনো কিছুর সংখ্যার ধারণা প্রকাশ করা হয়, তাকে বচন বলে।
অন্য ভাবে বলা যায়, ব্যাকরণে বিশেষ্য বা সর্বনামের সংখ্যাগত ধারণা প্রকাশের উপায়কে বলে বচন।
বচন কয় প্রকার ও কি কি :-
বাংলা ভাষায় বচন দু প্রকার। যথা-১. একবচন এবং
২. বহুবচন।
আরও পড়ুন :- বাচ্য কাকে বলে ও কত প্রকার?
একবচন কাকে বলে :-
যে শব্দ দিয়ে কোনো বস্তু, প্রাণী বা ব্যক্তির একটিমাত্র সংখ্যার ধারণা হয়, তাকে একবচন বলে।যেমন-
- পাখাটি খুঁজে পাচ্ছি না।
- গামছাখানা কোথায় রাখলে?
- কাজল কি বাড়ি ফিরেছে।
একবচন চেনার উপায় :-
বাংলা ভাষায় একবচন চেনার কিছু উপায় আছে। যেমন :১. শব্দের মূল রূপের সাথে কিছু যোগ না করে
- আজ স্কুল ছুটি।
- রীতা গান শিখতে গেছে।
- বাস ঢাকা ছেড়েছে।
২. শব্দের শেষে টি, টা, খান, খানা, খানি, গাছ, গাছা, গাছি ইত্যাদি নির্দেশক যোগ করে :
- মেয়েটি খুব চালাক।
- তোমার কলমটা দাও তো।
- নৌকাখানি বেশ সুন্দর হয়েছে।
- বইখানা আমি পড়েছি।
- দড়িগাছা দিয়ে যা তো মা।
- দাদুর হাতে লাঠিগাছা বেশ মানিয়েছে।
৩. শব্দের আগে এক, একটা, একটি, একখানা, একজন ইত্যাদি সংখ্যাবাচক শব্দ বসিয়ে
- এক দেশে ছিল এক রাজা।
- তোমার সাথে একটা কথা ছিল।
- একটি কলম নিয়ে দুভাইয়ের মধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে।
- একখানা ইংরেজি খবরের কাগজ এনো তো।
- একজন ছাত্র এসেছিল তোমার কাছে।
আরও পড়ুন :- অনুচ্ছেদ কি বা কাকে বলে?
বহুবচন কাকে বলে :-
যে শব্দ দিয়ে একের অধিক সংখ্যক বস্তু, ব্যক্তি বা প্রাণীর ধারণা পাওয়া যায়, তাকে বহুবচন বলে।যেমন -
- আমরা সেখানে গিয়েছিলাম।
- ছেলেরা মাঠে খেলছে।
- শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।
- রাখাল গরুরপাল লয়ে যায় মাঠে।
বহুবচন গঠনের নিয়ম ও উদাহরণ :-
বাংলা ভাষায় বহুবচন গঠনের নানা উপায় আছে। প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক এবং উন্নত প্রাণিবাচক ও ইতর প্রাণিবাচক শব্দভেদে বিভিন্ন ধরনের বহুবচনবোধক বিভক্তি, প্রত্যয় ও সমষ্টিবাচক শব্দযোগে বহুবচন গঠন করা হয়ে থাকে। যেমন :১. শব্দের শেষে রা, এরা, গুলো, গুলি, দের বিভক্তি যোগ করে
- ছেলেরা বল খেলছে।
- শ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকেছে।
- আমগুলো রাজশাহী থেকে এসেছে।
- গুলি বইগুলি জায়গা মতো তুলে রাখ।
- মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা শ্রদ্ধা করি।
আরও পড়ুন :- করণকারক কাকে বলে?
২. শব্দের শেষে গণ, বৃন্দ, বর্গ, কুল, মণ্ডলী, মালা, গুচ্ছ, পাল, দল, দাম, ঝাঁক, আবলি, সব, সমূহ, রাজি, রাশি, পুঞ্জ, শ্রেণি ইত্যাদি সমষ্টিবাচক শব্দ যোগ করে
- শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।
- ভক্তবৃন্দ কবিকে শুভেচ্ছা জানালেন।
- সন্ধ্যায় পক্ষিকূল কুপায় ফিরে এসেছে।
- শিক্ষকমণ্ডলী নবীন ছাত্রদের বরণ করে নিলেন।
- দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছি সিম্মু।
- আমি রবীন্দ্রনাথের ‘গল্পগুচ্ছ' পড়েছি।
- রাখাল গরুর পাল হয়ে যায় মাঠে।
- জাতীয় ক্রিকেটদলে তার জায়গা হয়েছে।
- শৈবালদামে পুকুর ভরেছে।
- পায়রার ঝাক বাকুম বাকুম করছে।
- আজ রাতে পদাবলি কীর্তন শুনতে যাব।
- পাখিসব করে রব রাতি পোহাইল।
- অতিরিক্ত বৃক্ষনিধনের ফলে বনসমূহ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। লাইব্রেরির গ্রন্থরাজির মধ্যে রয়েছে সমৃদ্ধ জ্ঞানের ভাণ্ডার।
- বাজারে নিয়ে যাবার জন্য পুষ্পরাশি চয়ন করা হয়েছে।
- মেঘপুঞ্জের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।
- ধনিকশ্রেণি সব সময় নিম্নশ্রেণির উপর খবরদারি করে থাকে।
৩. শব্দের আগে অনেক, অজস্র, অসংখ্য প্রচুর, বহু, বিস্তর, নানা, ঢের, সব, সকল, সমস্ত, হরেক ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে
- এবার পরীক্ষায় অনেক ছাত্র ফেল করেছে।
- তার অজস্র টাকা-পয়সা হয়েছে।
- অসংখ্য বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ এখনো অশিক্ষিত।
- বাজারে প্রচুর আম উঠেছে।
৪. একই শব্দ পর পর দুবার বসিয়ে
- বাগানটা ফুলে ফুলে ভরে গেছে।
- বরযাত্রীরা হাঁড়ি হাঁড়ি সন্দেশ নিয়ে এসেছে।
- মেয়ের বিয়েতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচা হয়ে গেল।
- তোমাকে বলে বলে আর পারলাম না।
- আমি খেটে খেটে সারা হলাম।।
- দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আজ ভিক্ষা জুটল না।
৫. আগে সংখ্যাবাচক শব্দ বসিয়ে :
- শিয়াল তার সাত ছেলেকে কুমিরের কাছে পড়তে দিল।
- দশ কেজি রসগোল্লা দিন তো।
৬. কখনো কখনো একবচনের রূপ দিয়ে :
- মানুষ মরণশীল।
- বাঙালি সব পারে।
- বাগানে ফুল ফুটেছে।
- বাজারে লোক জমেছে।
- পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়।
- বনে বাঘ থাকে।
- গরু আমাদের দুধ দেয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.