শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কি :-
'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' মধ্যযুগের প্রথম কাব্য। বাংলা সাহিত্যে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের স্থানটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভাষাতত্ত্বের দিক থেকে বিবেচনা করলে এই কাব্যের মূল্য অসাধারণ বলে গ্রহণযোগ্য।ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে প্রাচীন যুগের নিদর্শন চর্যাপদের পর এবং মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের মাঝামাঝি সময়ে আর কোন বাংলা কাব্য আবিষ্কৃত হয় নি।
মধ্যযুগের প্রথম পর্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক নিদর্শন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' রাধা কৃষ্ণের প্রেম উপাখ্যান। এ কাব্যে রাধা কৃষ্ণের প্রেম-কল্পনা পদাবলীর ন্যায় উন্নত ভাবাদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
মধ্যযুগের প্রথম পর্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক নিদর্শন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' রাধা কৃষ্ণের প্রেম উপাখ্যান। এ কাব্যে রাধা কৃষ্ণের প্রেম-কল্পনা পদাবলীর ন্যায় উন্নত ভাবাদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এখানে বড় করে দেখানো হয়েছে দৈহিক কামনাকে। সুতরাং রাধা কৃষ্ণের প্রেমই এই কাব্যের সৌন্দর্য, যা কাব্যের শুরুতে না থাকলেও ধীরে ধীরে ফুলের মতই বিকশিত হয়েছে।
কাব্যটির ভণিতায় কবির নাম বড়ু চণ্ডীদাস, অনন্ত বড়ু চণ্ডীদাস ইত্যাদি পাওয়া গেলেও কোথাও কাব্যনাম পাওয়া যায় নি। পুঁথির সঙ্গে একটি কাগজের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল, এখানে লেখা ছিল ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’ - এই শব্দটি।
এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বসন্ত রঞ্জন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' নামটির প্রদান করেন । সবার কাছে এই নামটিই প্রচলিত ও গৃহীত।
জন্মখণ্ডে কৃষ্ণ-আবির্ভাবের পৌরাণিক ভূমিকা রচিত হয়েছে। কংসের অত্যাচার থেকে মানুষকে মুক্ত করতে নারায়ণ কৃষ্ণরূপে জন্মগ্রহণ করেন এবং বৃন্দাবনে নন্দের গৃহে স্থানান্তরিত হয়। কৃষ্ণের সম্ভোগের জন্য লক্ষ্মীদেবী সাগর গোয়ালার ঘরে পদুমার গর্ভে রাধারূপে জন্ম নেয়।
তাম্বুলখণ্ড থেকে কাহিনী এক ভিন্ন পথে গমন করেছে। খসে গেছে পৌরাণিক আবেদন। এই খণ্ডে বড়ায়ির মুখে রাধার রূপকথা শুনে কৃষ্ণ রাধার সঙ্গলাভের আকাঙ্ক্ষায় বড়ায়ির হাতে ফুলপান দিয়ে দুতীরূপে তাকে রাধার কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু রাধাকে রাজী করাতে পারেনি কোনোভাবেই বড়ায়ি। রাধার হাতে চড় খেতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত বড়ায়িকে।
দানখণ্ডে কৃষ্ণ রাধার রূপযৌবন দাবী করেছে দানী সেজে মথুরার পথে এবং অল্পবয়সী রাধার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে।
নৌকাখণ্ডে কৃষ্ণ যমুনায় কাণ্ডারী সেজে গোপীগণকে পার করে নৌকা ডুবিয়ে রাধার সঙ্গে জলবিহারে মগ্ন হয়। এখান থেকেই রাধার মনের প্রতিকূলতা দূর হতে থাকে।
ভারখণ্ডে রাধা যৌবনপ্রাপ্তা। তাই এখন রাধা কৃষ্ণকে ভারী সেজে মথুরার হাটে পসরা নিয়ে যেতে বলেছে। বিনিময়ে সে দিয়েছে কৃষ্ণকে দেহদান করার প্রতিশ্রুতি।
ছত্রখণ্ডে রাধাকে সূর্যতাপ থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণের ছত্রধারণ এবং রাধাকর্তৃক রতিদানের আশ্বাস প্রদান করা হয়।
বৃন্দাবনখণ্ডে গোপীদের সঙ্গে কৃষ্ণের বনবিহার এবং রাধাকৃষ্ণের মিলন।
কালিয়দমন খণ্ডে কৃষ্ণের ঐশ্বরিক শক্তির প্রকাশ ঘটেছে।
যমুনাখণ্ডে জলকেলি ও গোপীদের বস্ত্রহরণ ইত্যাদি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
হারখণ্ডে কৃষ্ণ রাধার হার অপহরণ করেছে এবং রুষ্টা রাধা কৃষ্ণজননী যশোদার কাছে কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে।
বাণখণ্ডে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কৃষ্ণ রাধার প্রতি মদনবাণ নিক্ষেপ করে, এতে রাধা মূর্ছা যায়। ফলে কৃষ্ণের মনে অনুতাপ জাগে, বড়াই কৃষ্ণকে বন্ধন করে। পরে কৃষ্ণের অনুনয়ে বন্ধনমোচন করা হয়। কৃষ্ণ রাধার চৈতন্য সম্পাদন করে এবং উভয়ের মিলন ঘটে।
বংশীখণ্ডে কৃষ্ণ অপূর্ব এক বংশী নির্মাণ করে। সেই বাঁশির শব্দে রাধার প্রাণ-মন আকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু কৃষ্ণ আর রাধাকে ধরা দেয় না। অবশেষে রাধা কৃষ্ণের বাঁশি চুরি করে। বহু বাদ-বিবাদের পর ফেরৎ পায় কৃষ্ণ নিজের বাঁশি ।
বিরহখণ্ডে রাধার হৃদয়ের আর্তি প্রকাশ পেয়েছে। রাধার বিরহের তীব্র অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে এখানে। বহু অন্বেষণে রাধা কৃষ্ণকে খুঁজে পেয়েছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মিলনতৃপ্তা অবসন্না রাধা কৃষ্ণের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই অবকাশে কৃষ্ণের কংসবধের জন্য মথুরা যাত্রা শুরু হয়। জেগে ওঠে রাধার হৃদয়ে আবার বিরহের অনির্বাণ দাহ জ্বলতে থাকে। এই বেদনার মধ্য দিয়েই খণ্ডিত পুঁথির কাব্যকথা শেষ হয়েছে।
আবিষ্কার কাল ও আবিষ্কারক :-
আদি-মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে’র আবিষ্কার কাল ১৩১৬ বঙ্গাব্দ। প্রকাশকাল ১৩২৩ বঙ্গাব্দে।বিষ্ণুপুরের কাছে কাঁকিল্যা গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গোয়াল ঘরের মাচা থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের পুথিটি খুজে পান। কাব্যটির ভনিতায় কবির নাম বড়ু চন্ডীদাস, পুঁথির সঙ্গে কাগজের টুকরোতে এই শব্দটিও লেখা ছিল 'শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ'। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বসন্ত রঞ্জন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' নামটির উল্লেখ করেন ।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের নামকরণ :-
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের নামকরণ নিয়েও অনেক বিতর্ক রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামটি কাব্যের পুঁথি আবিষ্কারক বসন্ত রঞ্জন রায়ের দেওয়া।আরও পড়ুন :- বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্য কি?
কাব্যটির ভণিতায় কবির নাম বড়ু চণ্ডীদাস, অনন্ত বড়ু চণ্ডীদাস ইত্যাদি পাওয়া গেলেও কোথাও কাব্যনাম পাওয়া যায় নি। পুঁথির সঙ্গে একটি কাগজের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল, এখানে লেখা ছিল ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’ - এই শব্দটি।
এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বসন্ত রঞ্জন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' নামটির প্রদান করেন । সবার কাছে এই নামটিই প্রচলিত ও গৃহীত।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কাহিনী :-
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ রাধা-কৃষ্ণ প্রেমলীলা বিষয়ক কাব্য। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কাহিনী ১৩টি অংশে বিভক্ত – জন্মখণ্ড, তাম্বুলখণ্ড, দানখণ্ড, নৌকাখণ্ড, ভারখণ্ড, ছত্রখণ্ড, বৃন্দাবনখণ্ড, কালিয়দমনখণ্ড, যমুনাখণ্ড, হারখণ্ড, বাণখণ্ড, বংশীখণ্ড ও রাধাবিরহ।জন্মখণ্ডে কৃষ্ণ-আবির্ভাবের পৌরাণিক ভূমিকা রচিত হয়েছে। কংসের অত্যাচার থেকে মানুষকে মুক্ত করতে নারায়ণ কৃষ্ণরূপে জন্মগ্রহণ করেন এবং বৃন্দাবনে নন্দের গৃহে স্থানান্তরিত হয়। কৃষ্ণের সম্ভোগের জন্য লক্ষ্মীদেবী সাগর গোয়ালার ঘরে পদুমার গর্ভে রাধারূপে জন্ম নেয়।
তাম্বুলখণ্ড থেকে কাহিনী এক ভিন্ন পথে গমন করেছে। খসে গেছে পৌরাণিক আবেদন। এই খণ্ডে বড়ায়ির মুখে রাধার রূপকথা শুনে কৃষ্ণ রাধার সঙ্গলাভের আকাঙ্ক্ষায় বড়ায়ির হাতে ফুলপান দিয়ে দুতীরূপে তাকে রাধার কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু রাধাকে রাজী করাতে পারেনি কোনোভাবেই বড়ায়ি। রাধার হাতে চড় খেতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত বড়ায়িকে।
দানখণ্ডে কৃষ্ণ রাধার রূপযৌবন দাবী করেছে দানী সেজে মথুরার পথে এবং অল্পবয়সী রাধার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে।
আরও পড়ুন :- চর্যাপদ কি?
নৌকাখণ্ডে কৃষ্ণ যমুনায় কাণ্ডারী সেজে গোপীগণকে পার করে নৌকা ডুবিয়ে রাধার সঙ্গে জলবিহারে মগ্ন হয়। এখান থেকেই রাধার মনের প্রতিকূলতা দূর হতে থাকে।
ভারখণ্ডে রাধা যৌবনপ্রাপ্তা। তাই এখন রাধা কৃষ্ণকে ভারী সেজে মথুরার হাটে পসরা নিয়ে যেতে বলেছে। বিনিময়ে সে দিয়েছে কৃষ্ণকে দেহদান করার প্রতিশ্রুতি।
ছত্রখণ্ডে রাধাকে সূর্যতাপ থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণের ছত্রধারণ এবং রাধাকর্তৃক রতিদানের আশ্বাস প্রদান করা হয়।
বৃন্দাবনখণ্ডে গোপীদের সঙ্গে কৃষ্ণের বনবিহার এবং রাধাকৃষ্ণের মিলন।
কালিয়দমন খণ্ডে কৃষ্ণের ঐশ্বরিক শক্তির প্রকাশ ঘটেছে।
যমুনাখণ্ডে জলকেলি ও গোপীদের বস্ত্রহরণ ইত্যাদি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
হারখণ্ডে কৃষ্ণ রাধার হার অপহরণ করেছে এবং রুষ্টা রাধা কৃষ্ণজননী যশোদার কাছে কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে।
বাণখণ্ডে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কৃষ্ণ রাধার প্রতি মদনবাণ নিক্ষেপ করে, এতে রাধা মূর্ছা যায়। ফলে কৃষ্ণের মনে অনুতাপ জাগে, বড়াই কৃষ্ণকে বন্ধন করে। পরে কৃষ্ণের অনুনয়ে বন্ধনমোচন করা হয়। কৃষ্ণ রাধার চৈতন্য সম্পাদন করে এবং উভয়ের মিলন ঘটে।
বংশীখণ্ডে কৃষ্ণ অপূর্ব এক বংশী নির্মাণ করে। সেই বাঁশির শব্দে রাধার প্রাণ-মন আকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু কৃষ্ণ আর রাধাকে ধরা দেয় না। অবশেষে রাধা কৃষ্ণের বাঁশি চুরি করে। বহু বাদ-বিবাদের পর ফেরৎ পায় কৃষ্ণ নিজের বাঁশি ।
বিরহখণ্ডে রাধার হৃদয়ের আর্তি প্রকাশ পেয়েছে। রাধার বিরহের তীব্র অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে এখানে। বহু অন্বেষণে রাধা কৃষ্ণকে খুঁজে পেয়েছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মিলনতৃপ্তা অবসন্না রাধা কৃষ্ণের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই অবকাশে কৃষ্ণের কংসবধের জন্য মথুরা যাত্রা শুরু হয়। জেগে ওঠে রাধার হৃদয়ে আবার বিরহের অনির্বাণ দাহ জ্বলতে থাকে। এই বেদনার মধ্য দিয়েই খণ্ডিত পুঁথির কাব্যকথা শেষ হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের সমাজচিত্র :-
সাহিত্য মূলতঃ সমাজের সামাজিক প্রকাশ করে। বড়চন্ডীদাস তাঁর কাব্যে একটি সংহত সমাজ এবং দেশ-কালের চিত্রকে প্রকাশ করেছেন। আরও পড়ুন :- অভিসার কাকে বলে?
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মধ্যে নানাজাতি ও সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখিত হয়েছে। যেমন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, কুমার, তেলী প্রভৃতি।
কাব্যে রাধা-কৃষ্ণের মুখে যে সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে তৎকালীন সমাজের শিথিলতর যৌনজীবনের ওপর কটাক্ষ লক্ষ্যণীয়। বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময়, বিশেষ পশু বা প্রাণী দর্শনে শুভ-অশুভ বিষয়টির ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মধ্যে নানাজাতি ও সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখিত হয়েছে। যেমন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, কুমার, তেলী প্রভৃতি।
কাব্যে রাধা-কৃষ্ণের মুখে যে সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে তৎকালীন সমাজের শিথিলতর যৌনজীবনের ওপর কটাক্ষ লক্ষ্যণীয়। বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময়, বিশেষ পশু বা প্রাণী দর্শনে শুভ-অশুভ বিষয়টির ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়।
1 মন্তব্যসমূহ
Thank you ☺️
উত্তরমুছুনPlease do not enter any spam link in the comment box.