উচ্চারণ রীতি কাকে বলে? বাংলা উচ্চারণের নিয়ম সমূহ

উচ্চারণ রীতি কাকে বলে :-

শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য কিছু নিয়ম বা সূত্র রয়েছে এইসব নিয়ম-কানুনের সমষ্টিকে উচ্চারণ রীতি বলে।

তবে ভাষাতত্ত্ববিদ ও ব্যাকরণবিদগণ উচ্চারণ রীতি কাকে বলে এসম্পর্কে বলেছেন-

বাংলা ভাষার প্রতিটি শব্দের যথাযথভাবে সঠিক উচ্চারণের জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম বা সূত্র প্রণয়ন হয়েছে। এইসব নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে বলা হয় বাংলা ভাষার উচ্চারণ রীতি

শুদ্ধ উচ্চারণ কেন প্রয়োজন : -

বাংলা উচ্চারণের শুদ্ধতা রক্ষিত না হলে আমাদের ভাষার মূল অর্থ বা উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়। ভাষার অর্থ বোঝার বা বোধগম্যতার জন্য উচ্চারণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

তাই শুদ্ধ উচ্চারণ একদিকে যেমন ঠিক ভাবে মনোভাব প্রকাশে সহায়ক করে, তেমনি আবার শব্দের অর্থবিভ্রান্তি ও বিকৃতি ঘটার সম্ভাবনা থেকেও আমাদের মুক্ত রাখে। তাই শুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োজন অপরিসীম।


শুদ্ধ উচ্চারণের জন্যে আমাদের নীচের বিষয় গুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে :
  • প্রমিত কথ্য ভাষার বাচন ভঙ্গি অনুসরণ করা, অর্থাৎ চলিত ও আঞ্চলিক ভাষার পার্থক্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যথাযথভাবে ব্যবহার করা।
  • স্বরধ্বনি ব্যঞ্জনধ্বনির যথাযথ উচ্চারণ সম্পর্কে অবহিত হওয়া। অর্থাৎ ঠিক উচ্চারণস্থান থেকেই ধ্বনিগুলোকে উচ্চারণ করতে হবে।
  • উচ্চারণ-সূত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা।
  • আঞ্চলিকতা পরিহার করা।
  • প্রতিনিয়ত অনুশীলন বা চর্চা করা। যদি বানান উচ্চারণ সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই অভিধান দেখতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে তা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
উচ্চারণ রীতি কাকে বলে

বাংলা উচ্চারণের দশটি নিয়ম :-

১ - শব্দের আগে 'অ' এর পরে 'য’ ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রে 'অ'-এর উচ্চারণ 'ও' কারের মতো হয়। যেমন- অদ্য (ওদদো), কন্যা (কোননা) ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :- কারক কাকে বলে?

২ - শব্দের নীচে ব-ফলার কোনো উচ্চারণ নেই; যেমন-শ্বাস, শ্বাপদ, দ্বাপর, দ্বার।

৩ - যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সংযুক্ত ম-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন - সূক্ষ্ম (শুকখোঁ), যক্ষ্মা (জকখাঁ) ইত্যাদি।

৪ - পদের মধ্যে কিংবা অন্তে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে য-ফলা যুক্ত সাধারণত তার উচ্চারণ হয় না। যেমন- সন্ধ্যা (শোনধা), স্বাস্থ্য (শাসথো) ইত্যাদি।

৫ - শব্দের মাঝে বা শেষে 'ক্ষ'-এর উচ্চারণ 'কৃথ' হয়ে ক। যেমন-দক্ষতা (দোক্‌খোতা), পক্ষ (পোক্‌খো) ইত্যাদি।

৬ - জ্ঞ অর্থাৎ জ্ + ঞ শব্দের গোড়ায় গঁ উচ্চারিত হয়-জ্ঞান, জ্ঞাপন। শব্দের মধ্যে গঁগ উচ্চারিত হয় - বিজ্ঞান, সজ্ঞান।

৭ - শব্দের দ্বিতীয় শব্দাংশে ই বা উ ধ্বনি থাকলে প্রথম শব্দাংশের এ বা এ-কার এ উচ্চারিত হয়। ফেন-ফ্যান কিন্তু ফেনিল-ফেনিল,

৮ - রেফ এবং র্ ফলার বৈশিষ্ট্য এই যে শব্দের মধ্যে বা শেষে এরা ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব ঘটায়।

৯ - হ-য়ের সঙ্গে মূর্ধন্য-ণ, দন্ত্য-ন ও ম-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে হ পরে চলে যায়। অপরাহ্ অপোরান্নহো/অপোরানৃহো, ব্রাহ্মণ-ব্রামহোন।

আরও পড়ুন :- বিভক্তি কাকে বলে?

১০ - বাংলায় বিসর্গের উচ্চারণ সম্পর্কে একটি কথাই স্মরণীয়। বিসর্গের উচ্চারণ নেই। কেবল তার প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব হয়। দুঃখ দুক্‌খো, অধঃপতন অধোপপতন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ