দ্বিস্বর কাকে বলে | যৌগিক স্বরধ্বনি কাকে বলে | দ্বিস্বর বা যৌগিক স্বরধ্বনি কয়টি ও কী কী উদাহরণ দাও

কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে উপাদানসমূহ পাওয়া যায় সেগুলোকে পৃথকভাবে ধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনিগুলোকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা হয়।

১. স্বরধ্বনি
২. ব্যঞ্জনধ্বনি।

স্বরধ্বনিকে আবার অন্য দিক থেকে দুটি পৃথক শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন :-

১ মৌলিক স্বরধ্বনি ও

২ যৌগিক স্বরধ্বনি বা সন্ধ্যক্ষর বা দ্বিস্বর ধ্বনি।

যৌগিক স্বরধ্বনি বা দ্বিস্বর ধ্বনি কাকে বলে :-

পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে দ্রুত উচ্চরণের সময় তা একটি সংযুক্ত স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয় যা যৌগিক স্বরধ্বনি নামে পরিচিত।

অর্থাৎ একসঙ্গে উচ্চারিত দুটো মিলিত স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বর বা দ্বিস্বর ধ্বনি বলা হয়।
যৌগিক স্বরধ্বনি বা দ্বিস্বর ধ্বনি কাকে বলে
অথবা আমরা বলতে পারি যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় তাদেরকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে।

যখন ভিন্ন দুটি বা তার অধিক স্বরধ্বনি একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে একটি যুক্ত স্বরধ্বনির সৃষ্টি করে, তখন তাকে বলা হয় যৌগিক স্বরধ্বনি বা সন্ধ্যক্ষর।


যেমন- ঐ (অ-ই), ঔ (অ-উ)।

যৌগিক স্বরধ্বনি কয়টি ও কী কী :-

দ্বি-স্বরে দুটি স্বর থাকে একটি পূর্ণ, আর একটি অপূর্ণ। বাংলায় পরের স্বরটিই সাধারণত অর্ধ হয়। বাংলা ভাষায় ২৫টি যৌগিক স্বরধ্বনি রয়েছে। বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরজ্ঞাপক দুটো বর্ণ রয়েছে। ঐ এবং ঔ। উদাহরণ : কৈ, বৌ। অন্য যৌগিক স্বরের চিহ্ন স্বরূপ কোনো বর্ণ নেই।

যেমন - ঐ (অ + ই বা ও + ই), ঔ (অ + উ বা ও + উ)।

ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এই ধরনের আরও অনেক যৌগিক স্বরধ্বনির সন্ধান দিয়েছেন।

যেমন :-

দুই স্বরের সাহায্যে যৌগিক স্বরধ্বনি -

অও (কও = ক্+অও); আও (বাঁচাও = বাঁচ্ + আও); আই (পাই = প্ + আই); অ্যাও (ম্যাও = ম্ + অ্যাও); এই (নই = ন + এই ); এউ (কেউ = ক + এউ); এও (বলেও = বল + এও); ওউ (বউ = ব্ + ওউ) প্রভৃতি।

তিনটি স্বরধ্বনির সাহায্যে যৌগিক স্বরধ্বনি -

অওআ (লওয়া = ল্ + অওআ); ইএও (গিয়েও = গ্ + ইএও); আইআ (লাফাইয়া = লাফ্ + আইআ)।

চারটি স্বরধ্বনির সাহায্যে যৌগিক স্বরধ্বনি -

আইআও (বানাইয়াও = বান্ + আইআও)।


পাঁচটি স্বরধ্বনির সমবায়ে যৌগিক স্বরধ্বনি -

আওআইআ (খাওয়াইয়া = খ + আওআইআ)।

ছয়টি স্বরধ্বনির সমবায়ে যৌগিক স্বরধ্বনি -

আওআইআও (খাওয়াইয়াও = খ + আওআইআও)।

কিন্তু উপরে বর্ণিত সকল যৌগিক স্বরধ্বনির জন্য পৃথক কোনো যৌগিক স্বরবর্ণ নেই। কেবলমাত্র দুটি যৌগিক স্বরধ্বনির জন্য দুটি যৌগিক স্বরবর্ণ (লিখিত রূপ) আছে। সেই দুটি যৌগিক স্বরবর্ণ হল ঐ এবং ঔ। ঐগুলিকে সন্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর ও বলা হয়।

মৌলিক ও যৌগিক স্বরধ্বনির পার্থক্য :-

মৌলিক এবং যৌগিক স্বরধ্বনির মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি নিম্নৰূপ:

মৌলিক স্বরধ্বনি:

১. মৌলিক স্বরধ্বনি হল একটি শুদ্ধ নির্দিষ্ট আবৃত্তির স্বরধ্বনি। এর আবৃত্তি সংখ্যা নির্দিষ্ট এবং স্থির।

২. মৌলিক স্বরধ্বনির তরঙ্গরূপ সরল।

৩. মৌলিক স্বরধ্বনি শুনলে মনে হয় একই ধরনের স্বর।

যৌগিক স্বরধ্বনি:

১. যৌগিক স্বরধ্বনিতে একাধিক মৌলিক স্বরধ্বনির সমষ্টি থাকে।

২. যৌগিক স্বরধ্বনির আবৃত্তি সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, পরিবর্তনশীল।

৩. যৌগিক স্বরধ্বনির তরঙ্গরূপ অসরল।

৪. যৌগিক স্বরধ্বনি শুনলে বিভিন্ন ধরনের স্বর মনে হয়।

৫. বিভিন্ন উচ্চতার মৌলিক স্বরধ্বনির সমষ্টিই যৌগিক স্বরধ্বনি।

এভাবে মৌলিক স্বরধ্বনি হলো শুদ্ধ একক আবৃত্তির স্বরধ্বনি যেখানে যৌগিক স্বরধ্বনিতে একাধিক মৌলিক স্বরধ্বনির মিশ্রণ থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ