আজ আমরা তৎসম শব্দ কি? তৎসম শব্দের শ্রেনীবিভাগ ও তৎসম শব্দের তালিকা নিয়ে আলোচনা করব আশা করি তোমাদের উপকারে আসবে।
যেমন:- পিতা, মাতা, শিক্ষালয়, আচার্য, শিক্ষক, সকল, পদ, ঘাস প্রভৃতি হল বাংলা শব্দ ভান্ডারের তৎসম শব্দের উদাহরণ।
১. উচ্চারণ ও লিপিবদ্ধকরণ:
- তৎসম শব্দের উচ্চারণ ও বর্ণবিন্যাস সংস্কৃতভাষার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিল।
- কোন ধ্বনি পরিবর্তন ছাড়াই বাংলায় গৃহীত হয়েছে এই শব্দগুলি।
২. অর্থগত সাম্যতা:
- তৎসম শব্দের অর্থ সংস্কৃত ও বাংলা উভয় ভাষায়ই প্রায় একই।
- কোন অর্থগত পরিবর্তন ছাড়াই এসব শব্দ বাংলায় প্রবেশ করেছে।
৩. বাক্যের সঙ্গে মিশ্রণ:
- বাংলা বাক্যের সব অংশেই এই তৎসম শব্দগুলি সহজেই মিশে যায়।
- এদের ব্যবহারে কোন দ্বন্দ্ব বা অমিল হয় না।
৪. ব্যঞ্জন ও বিশেষণ:
- বাংলা ব্যঞ্জন এবং বিশেষণের সঙ্গে এই শব্দগুলির সামঞ্জস্য রয়েছে।
- বাংলা ভাষার সাথে সমন্বিত হয়ে এই শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়।
৫. পরিবর্তন নেই:
- বাংলাতে আগমণের পরও এই শব্দগুলির উচ্চারণ, অর্থ ও বর্ণগঠনে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
- সংস্কৃত ও বাংলা উভয়ে একই রূপে বহাল রয়েছে এসব শব্দ।
এইরূপ নানা দিক থেকে তৎসম শব্দের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা যেতে পারে।
১. শব্দের উচ্চারণ ও বর্ণবিন্যাস দেখুন - যদি সংস্কৃতের মতো হয় তাহলে সম্ভবত তৎসম।
২. শব্দের অর্থ যাচাই করুন - যদি সংস্কৃত ও বাংলাতে একই অর্থে ব্যবহৃত হয় তাহলে তৎসম।
৩. দ্বিতীয়াক্ষরের উপর নজর দিন - অনেক তৎসম শব্দের দ্বিতীয়াক্ষর 'অ' দিয়ে শেষ হয়।
৪. শব্দ গঠনে সংস্কৃতের নীতি অনুসরণ করে - একাধিক সংস্কৃত শব্দের যোগ দিয়ে গঠিত।
৫. বাংলা বাক্যে সহজ ভাবে মিশে যায় - বাক্য গঠনে কোনও বাধা প্রদর্শন করে না।
৬. অভিধান বা শব্দকোষের সাহায্য নিতে পারেন।
৭. অধ্যাপক ও সংস্কৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
এইভাবে তৎসম শব্দগুলি চেনা সম্ভব।
১. প্রাচীন বাংলা ভাষায় শক্তিশালী তাৎপর্যের শব্দের ঘাটতি ছিল, তৎসম শব্দ এই ঘাটতি পূরণ করে।
২. তৎসম শব্দের মাধ্যমে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে এবং এটি বেশি বৈজ্ঞানিক ও সাহিত্যিক হয়েছে।
৩. তৎসম শব্দের আগমনে বড় বড় ধারণা ও শক্তিশালী বিষয়গুলো বাংলা ভাষায় প্রকাশের সুযোগ পায়।
৪. তৎসম শব্দ সংস্কৃতভাষার পরিচিত ব্যবস্থা, ফলে বাংলার কাছে গ্রহণ করা খুবই সহজ হয়েছে।
৫. তৎসম শব্দের সাহায্যে অনেক প্রযুক্তিগত ও বিজ্ঞানসম্মত শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে যা একটি উন্নত ভাষার নিদর্শন।
এরকমভাবে সামাজিক প্রয়োজনের দরুন এবং ভাষার উন্নতির জন্য তৎসম শব্দের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
তো, আমরা তৎসম শব্দ কি ভাবে বাংলা ভাষার প্রবেশ করলো তা দিয়ে শুরু করি।
আমরা জানি যে মানুষের কণ্ঠ নিঃসৃত অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। এই শব্দকে নানা দিক থেকে ভাগ করা যায়। যেমন
উৎপত্তির দিক থেকে শব্দকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে তৎসম শব্দ একটি।
- উৎপত্তির দিক থেকে
- গঠনের দিক থেকে ও
- অর্থের দিক থেকে।
উৎপত্তির দিক থেকে শব্দকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে তৎসম শব্দ একটি।
আরও পড়ুন :- শব্দ ও পদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
বাংলা ভাষায় প্রচুর শব্দ রয়েছে যেগুলো সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এদের মধ্যে কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো কোনো প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের বৈয়াকরণগণ 'তৎসম' বা তার (সংস্কৃতের) সমান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, প্রায় সকল বৈয়াকরণই সংস্কৃতের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল ছিলেন। তাই হিন্দি কিংবা গুজরাটি থেকে আসা শব্দের সঙ্গে সংস্কৃতকে একই কাতারে রাখা যায়নি, যদিও এই তিনটি ভাষাই ইন্দো-ইরানীয় ভাষা-শাখারই অন্তর্গত। দীর্ঘদিন এরূপ ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল যে, বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার 'কন্যা সমান। আর সেই কারণেই সংস্কৃতের এমন প্রাধান্য বৈয়াকরণদের মাঝে রয়ে গেছে।
যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই যে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলিকে তৎসম শব্দ বলে।
অথবা আমরা বলতে পারি, যে সমস্ত শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্য বা সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে এবং অবিকৃত রূপে বাংলা ভাষায় টিকে আছে সেই সমস্ত শব্দ কে তৎসম শব্দ বলা হয়।
আরও পড়ুন :- পরিভাষিক শব্দ কি? এর তালিকা সমূহ।
তৎসম শব্দের উদাহরণ :-
বাংলা ভাষায় প্রচুর শব্দ রয়েছে যেগুলো সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এদের মধ্যে কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো কোনো প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের বৈয়াকরণগণ 'তৎসম' বা তার (সংস্কৃতের) সমান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, প্রায় সকল বৈয়াকরণই সংস্কৃতের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল ছিলেন। তাই হিন্দি কিংবা গুজরাটি থেকে আসা শব্দের সঙ্গে সংস্কৃতকে একই কাতারে রাখা যায়নি, যদিও এই তিনটি ভাষাই ইন্দো-ইরানীয় ভাষা-শাখারই অন্তর্গত। দীর্ঘদিন এরূপ ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল যে, বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার 'কন্যা সমান। আর সেই কারণেই সংস্কৃতের এমন প্রাধান্য বৈয়াকরণদের মাঝে রয়ে গেছে।
তৎসম শব্দ কাকে বলে :-
‘তৎ’ কথাটির অর্থ ‘তার' অর্থাৎ সংস্কৃতের এবং ‘সম' কথাটির অর্থ ‘সমান'। সুতরাং তৎসম কথার অর্থ তার অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান।যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই যে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলিকে তৎসম শব্দ বলে।
অথবা আমরা বলতে পারি, যে সমস্ত শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্য বা সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে এবং অবিকৃত রূপে বাংলা ভাষায় টিকে আছে সেই সমস্ত শব্দ কে তৎসম শব্দ বলা হয়।
আরও পড়ুন :- পরিভাষিক শব্দ কি? এর তালিকা সমূহ।
তৎসম শব্দের উদাহরণ :-
যেমন:- পিতা, মাতা, শিক্ষালয়, আচার্য, শিক্ষক, সকল, পদ, ঘাস প্রভৃতি হল বাংলা শব্দ ভান্ডারের তৎসম শব্দের উদাহরণ।
তৎসম শব্দের শ্রেনীবিভাগ :-
এই তৎসম শব্দ কে আবার অনেক ভাষাতাত্ত্বিক দুই ভাগে ভাগ করেছেন যথা-
১ - সিদ্ধ তৎসম শব্দ ও
২ - অসিদ্ধ তৎসম শব্দ।
যেমন :- সূর্য, মিত্র, কৃষ্ণ, লতা, প্রভৃতি শব্দ।
যেমন :- কৃষাণ, ঘর, চল, ডাল, প্রভৃতি শব্দ।
১ - সিদ্ধ তৎসম শব্দ ও
২ - অসিদ্ধ তৎসম শব্দ।
সিদ্ধ তৎসম শব্দ কাকে বলে :-
যেসব শব্দ বৈদিক বা সংস্কৃত সাহিত্যে পাওয়া যায় এবং যেগুলি ব্যাকরণ সিদ্ধ বা ব্যবহৃত হয় সেই শব্দ গুলোকে সিদ্ধ তৎসম বলা হয়।যেমন :- সূর্য, মিত্র, কৃষ্ণ, লতা, প্রভৃতি শব্দ।
অসিদ্ধ তৎসম শব্দ কাকে বলে :-
যে সকল শব্দ বৈদিক বা সংস্কৃত সাহিত্যে পাওয়া যায় না এবং সংস্কৃত ব্যাকরণ সিদ্ধ নয় অর্থাৎ লোক মুখে প্রচলিত, সেই শব্দ সমূহকে অসিদ্ধ তৎসম শব্দ বলে।যেমন :- কৃষাণ, ঘর, চল, ডাল, প্রভৃতি শব্দ।
আরও পড়ুন :- সংখ্যাবাচক শব্দের তালিকা
তৎসম শব্দের তালিকা :-
রাম | রাবণ | পুত্র | মাতা | পিতা |
জননী | পক্ষী | নীড় | নীর | দীর্ঘ |
বাতায়ন | ভূমিকা | উচ্চ | নিম্ন | আদেশ |
বর্জন | সূর্য | চন্দ্র | জল | গৃহ |
মৃত্তিকা | অলক | মর্ত্য | স্বর্গ | লোভ |
সাধু | ঋষি | প্রত্যাঘাত | কর্ষণ | বর্ষণ |
বৃষ্টি | কণা | বাণী | বণিক | লৌহ |
বীণা | রুদ্র | চণ্ডাল | কৃষক | দিবা |
সৌর্য | বীর্য | কৃতিত্ব | আদিত্য | নারায়ণ |
দেব | দেবী | দর্শন | বয়ন | গমন |
রাত্রি | মুষ্ঠি | কপাল | ত্বক | জিহ্বা |
নাসিকা | আকর | সমুদ্র | নদী | মেঘ |
আলোক | রাজ্য | রাজধানী | এক | দশ |
উদ্যান | রাজা | রাণী | রাজপুত্র | বৃক্ষ |
পশু | লতা | নর | নারী | বেদ |
পন্থা | শুষ্ক | পুরস্কার | আদেশ | অনুরোধ |
অনুবাদ | উদ্ধার | উন্নত | বেদান্ত | উপনিষদ |
পুরাণ | ইতিহাস | কর্ণ | চক্ষু | ভারতবর্ষ |
রাষ্ট্র | মস্তক | হস্ত | উদর | জঠর |
তৎসম শব্দের বৈশিষ্ট্য :-
তৎসম শব্দের বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত ভাবে নিম্নরূপ আলোচনা করা যেতে পারে:১. উচ্চারণ ও লিপিবদ্ধকরণ:
- তৎসম শব্দের উচ্চারণ ও বর্ণবিন্যাস সংস্কৃতভাষার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিল।
- কোন ধ্বনি পরিবর্তন ছাড়াই বাংলায় গৃহীত হয়েছে এই শব্দগুলি।
২. অর্থগত সাম্যতা:
- তৎসম শব্দের অর্থ সংস্কৃত ও বাংলা উভয় ভাষায়ই প্রায় একই।
- কোন অর্থগত পরিবর্তন ছাড়াই এসব শব্দ বাংলায় প্রবেশ করেছে।
৩. বাক্যের সঙ্গে মিশ্রণ:
- বাংলা বাক্যের সব অংশেই এই তৎসম শব্দগুলি সহজেই মিশে যায়।
- এদের ব্যবহারে কোন দ্বন্দ্ব বা অমিল হয় না।
৪. ব্যঞ্জন ও বিশেষণ:
- বাংলা ব্যঞ্জন এবং বিশেষণের সঙ্গে এই শব্দগুলির সামঞ্জস্য রয়েছে।
- বাংলা ভাষার সাথে সমন্বিত হয়ে এই শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়।
৫. পরিবর্তন নেই:
- বাংলাতে আগমণের পরও এই শব্দগুলির উচ্চারণ, অর্থ ও বর্ণগঠনে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
- সংস্কৃত ও বাংলা উভয়ে একই রূপে বহাল রয়েছে এসব শব্দ।
এইরূপ নানা দিক থেকে তৎসম শব্দের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা যেতে পারে।
তৎসম শব্দ চেনার উপায় :-
তৎসম শব্দ চেনার কিছু উপায় নিম্নরূপ:১. শব্দের উচ্চারণ ও বর্ণবিন্যাস দেখুন - যদি সংস্কৃতের মতো হয় তাহলে সম্ভবত তৎসম।
২. শব্দের অর্থ যাচাই করুন - যদি সংস্কৃত ও বাংলাতে একই অর্থে ব্যবহৃত হয় তাহলে তৎসম।
৩. দ্বিতীয়াক্ষরের উপর নজর দিন - অনেক তৎসম শব্দের দ্বিতীয়াক্ষর 'অ' দিয়ে শেষ হয়।
৪. শব্দ গঠনে সংস্কৃতের নীতি অনুসরণ করে - একাধিক সংস্কৃত শব্দের যোগ দিয়ে গঠিত।
৫. বাংলা বাক্যে সহজ ভাবে মিশে যায় - বাক্য গঠনে কোনও বাধা প্রদর্শন করে না।
৬. অভিধান বা শব্দকোষের সাহায্য নিতে পারেন।
৭. অধ্যাপক ও সংস্কৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
এইভাবে তৎসম শব্দগুলি চেনা সম্ভব।
তৎসম শব্দের প্রয়োজনীয়তা :-
তৎসম শব্দের বাংলা ভাষায় প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিত ভাবে নিম্নরূপ আলোচনা করা যেতে পারে-১. প্রাচীন বাংলা ভাষায় শক্তিশালী তাৎপর্যের শব্দের ঘাটতি ছিল, তৎসম শব্দ এই ঘাটতি পূরণ করে।
২. তৎসম শব্দের মাধ্যমে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে এবং এটি বেশি বৈজ্ঞানিক ও সাহিত্যিক হয়েছে।
৩. তৎসম শব্দের আগমনে বড় বড় ধারণা ও শক্তিশালী বিষয়গুলো বাংলা ভাষায় প্রকাশের সুযোগ পায়।
৪. তৎসম শব্দ সংস্কৃতভাষার পরিচিত ব্যবস্থা, ফলে বাংলার কাছে গ্রহণ করা খুবই সহজ হয়েছে।
৫. তৎসম শব্দের সাহায্যে অনেক প্রযুক্তিগত ও বিজ্ঞানসম্মত শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে যা একটি উন্নত ভাষার নিদর্শন।
এরকমভাবে সামাজিক প্রয়োজনের দরুন এবং ভাষার উন্নতির জন্য তৎসম শব্দের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.