অনেকে বলেন খ্রি: পূ: যুগেও বাঙালির অস্তিত্ব ছিল। শুধু ভারত ও বাংলাদেশে নয়, এখনকার পাকিস্তান, আফগানিস্থান ইত্যাদি দেশেও। তাই যদি হয়, তবে বলা যাবে বাঙালিরা একবিংশ শতকেও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
পৃথিবীর সব প্রান্তেই এখন বাঙালির জয়জয়কার। সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলো, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সবকিছুতেই বাঙালি চলে এসেছে প্রথম সারিতে। এমনকী লোকসংখ্যার বিচারেও। ভাষা ব্যবহারের দিক থেকে তো পৃথিবীতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে এই বাংলা ভাষা।
সুতরাং এর থেকে বলা যায় বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলে তাকে বাংলা ভাষা বলে।
আধুনিক জার্মান মনীষী হুমবোল্ট ভাষা কি এ সম্পর্কে বলেছেন -
আধুনিক চিন্তাবিদেরা মনে করেন -
ভাষা মানুষের সৃষ্টি, ঈশ্বরের নয়। ভাষা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সেতু।
আচার্য সুকুমার সেন ভাষা (bhasha kake bole) সম্পর্কে বলেছেন -
ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষা কাকে বলে এ সম্পর্কে বলেছেন -
ভাষাবিজ্ঞানী স্টার্টেভান্ট ভাষার বিজ্ঞানসম্মত ও সর্বজনগৃহীত সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন –
অর্থাৎ ভাষা হল মানুষের উচ্চারিত প্রণালীবদ্ধ ধ্বনি-সংকেত, যা দিয়ে এক একটি বিশিষ্ট সমাজ পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে।
(৪) ষষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন ছিল _ 'র. এর' ইত্যাদি। যথা, 'রূপের পাথারে আঁখি ডুবিয়া রহিল।
(২) স্বরসঙ্গতি লক্ষণীয় _ দেশী > দিশি
(৩) বহুপদী ক্রিয়ারূপ দেখা যায় _ গান করা, খেলা করা
(৪) ইংরেজি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি বহু বিদেশি শব্দের ব্যবহার চেয়ার, টেবিল, আলপিন, হাকিম, কুপন ইত্যাদি।
(৫) নতুন নতুন ছন্দোরীতি এবং গদ্যছন্দের ব্যবহার সম্প্রতি ঘটেছে।
আধুনিক বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত দেশের জ্ঞানবিজ্ঞান এদেশে প্রচারিত হচ্ছে। ফলে আধুনিক চিন্তা ভাবনার বাহন হিসেবে বাংলা ভাষা ক্রমেই অধিকতর যোগ্য হয়ে উঠছে। তাছাড়া বাংলা এখন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহারে নিজের যথোপযুক্ততা প্রমাণ করছে এবং প্রয়োজনবোধে বাইরের প্রভাবে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে।
বাংলা ভাষা কাকে বলে :-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় বলা যায়,'বাংলাদেশের ইতিহাস খণ্ডতার ইতিহাস। পূর্ববঙ্গ পশ্চিমবঙ্গ, রাঢ় বরেন্দ্রের ভাগ কেবল ভূগোলের ভাগ নয়; অন্তরের ভাগও ছিল তার সঙ্গে জড়িয়ে, সমাজের মিলও ছিল না। তবু এর মধ্যে এক ঐক্যের ধারা চলে এসেছে সে ভাষার ঐক্য নিয়ে। আমাদের যে বাঙালি বলা হয়েছে তার সংজ্ঞা হচ্ছে, আমরা বাংলা বলে থাকি।'
সুতরাং এর থেকে বলা যায় বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলে তাকে বাংলা ভাষা বলে।
ভাষা কাকে বলে :-
আধুনিক জার্মান মনীষী হুমবোল্ট ভাষা কি এ সম্পর্কে বলেছেন -
'মানুষের ভাষাই হল তার আত্মা এবং তার আত্মাই হল তার ভাষা'
আধুনিক চিন্তাবিদেরা মনে করেন -
ভাষা মানুষের সৃষ্টি, ঈশ্বরের নয়। ভাষা হল মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সেতু।
আচার্য সুকুমার সেন ভাষা (bhasha kake bole) সম্পর্কে বলেছেন -
মানুষের উচ্চারিত বহুজনবোধ্য ধবনি সমষ্টিই ভাষা
ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষা কাকে বলে এ সম্পর্কে বলেছেন -
“মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোন বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দ সমষ্টিকে ভাষা বলে।”
ভাষাবিজ্ঞানী স্টার্টেভান্ট ভাষার বিজ্ঞানসম্মত ও সর্বজনগৃহীত সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন –
“A language is a system of arbitrary vocal symbols by which members of a social group co-operate and interact."
অর্থাৎ ভাষা হল মানুষের উচ্চারিত প্রণালীবদ্ধ ধ্বনি-সংকেত, যা দিয়ে এক একটি বিশিষ্ট সমাজ পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারে।
যেমন, বাংলা ভাষায় রাম মাকে বললো, 'মা খিদে পেয়েছে।' মা বললেন, 'চল দিচ্ছি।' রামের কথায় মা তার মনের ভাব জানতে পারলেন। এখানে রাম ও মা দুটি পৃথক মানুষ। তারা কতকগুলি ধ্বনি বা শব্দ যথাযথ ব্যবহার করে তার সাহায্যে পারস্পরিক ভাববিনিময় করলো, একে বলা হয় ভাষা।
১ - সাধু ভাষা ও
২ - চলিত ভাষা।
ভাষা কত প্রকার ও কি কি :-
ভাষা সাধারণত দুই প্রকার যথা -১ - সাধু ভাষা ও
২ - চলিত ভাষা।
বিস্তারিত জানুন :- সাধু ও চলিত ভাষা কি? এদের উদাহরণ ও বৈশিষ্ট্য?
ঐতিহাসিকদের মতে, বাংলা ভাষার মূলে আছে আর্যরা। অনুমান করা হয় খ্রিঃ পূঃ ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতবর্ষে আসে। সেই সময় ভারতে বসবাস করত অনার্যরা। তাদের ভাষা, আচার-আচরণ, খাওয়া-পাওয়া খুব উন্নত ছিল না। বুদ্ধিও সেইরকম ছিল না। এই সুযোগটাই নিয়েছিল আর্যরা। আস্তে আস্তে তাই তারা দখল নিয়েছিল গোটা ভারতবর্ষ।
আর্যদের বৃত্তি ছিল পশুপালন করা। যাযাবরী কায়দায় তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ালেও, তাদের ভাষা ও সাহিত্য ছিল খুবই শক্তিশালী। ফলে অনার্যদের উপর প্রভাব ফেলতে তাদের বিশেষ অসুবিধা হয়নি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে তারা আস্তে আস্তে পুরো ভারতবর্ষের উপর প্রভাব ফেলতে থাকে।
বিভিন্ন দলের মধ্যে ভাষাগত অনেক পার্থক্য ছিল ঠিকই, কিন্তু তাদের মধ্যে মিলটাই ছিল বেশি। অনুমান করা হয়, তারা কথা বলত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায়। তারা প্রথম দিকে রচনা করেছিল বিভিন্ন ধরনের দেব গীতামূলক কাব্য। যেমন- ঋগ্বেদ সংহিতা, বেদ, উপনিষদ প্রভৃতি। যাই হোক এই বৈদিক দেবগীতিমূলক ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর হঠাৎ করে হয়নি। এর জন্যে অনেক সময় লেগেছিল। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সেটা প্রায় আড়াই হাজার বছর।
কিভাবে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, মূল আর্য ভাষাভাষী মানুষ আনুমানিক খ্রি:পূ: ২৫০০ অব্দে রাশিয়ার উরাল পর্বতের পাদদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণে মূল আর্য বা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকে নানা প্রান্তে পৃথিবীতে দশটি ভাষা বংশের উদ্ভব হয়।
এই দশটি শাখার অন্যতম একটি হল ইন্দো-ইরানীয়। তা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ইরানীয় আর্য, দরদীয় ও ভারতীয় আর্য ভাষা। প্রাচীন ভারতীয় আর্যের দুটি রূপ প্রচলিত ছিল কথ্যরূপ ও সাহিত্যিক রূপ। বেদ লেখা হয়েছিল সাহিত্যিক ভাষায়।
আর কথ্য রূপের ছিল চারটি আঞ্চলিক উপভাষা। প্রাচ্য, উদীচ্য, মধ্যদেশীয় ও দাক্ষিণাত্য। এই কথ্য উপভাষাগুলি লোকমুখে স্বাভাবিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই সূচনা ঘটল মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার।
বাংলা ভাষার ইতিহাস :-
অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা ভাষাও বেঁচে আছে মানুষের মুখে, লেখকের লেখায়। বিভিন্ন উপভাষাকে টপকে বাংলা বেঁচে আছে আদর্শ কথ্য বাংলায়। শিষ্টজনের মুখে, পত্র পত্রিকায় লেখকের রচনায়।ঐতিহাসিকদের মতে, বাংলা ভাষার মূলে আছে আর্যরা। অনুমান করা হয় খ্রিঃ পূঃ ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতবর্ষে আসে। সেই সময় ভারতে বসবাস করত অনার্যরা। তাদের ভাষা, আচার-আচরণ, খাওয়া-পাওয়া খুব উন্নত ছিল না। বুদ্ধিও সেইরকম ছিল না। এই সুযোগটাই নিয়েছিল আর্যরা। আস্তে আস্তে তাই তারা দখল নিয়েছিল গোটা ভারতবর্ষ।
আর্যদের বৃত্তি ছিল পশুপালন করা। যাযাবরী কায়দায় তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ালেও, তাদের ভাষা ও সাহিত্য ছিল খুবই শক্তিশালী। ফলে অনার্যদের উপর প্রভাব ফেলতে তাদের বিশেষ অসুবিধা হয়নি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে তারা আস্তে আস্তে পুরো ভারতবর্ষের উপর প্রভাব ফেলতে থাকে।
বিভিন্ন দলের মধ্যে ভাষাগত অনেক পার্থক্য ছিল ঠিকই, কিন্তু তাদের মধ্যে মিলটাই ছিল বেশি। অনুমান করা হয়, তারা কথা বলত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায়। তারা প্রথম দিকে রচনা করেছিল বিভিন্ন ধরনের দেব গীতামূলক কাব্য। যেমন- ঋগ্বেদ সংহিতা, বেদ, উপনিষদ প্রভৃতি। যাই হোক এই বৈদিক দেবগীতিমূলক ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় রূপান্তর হঠাৎ করে হয়নি। এর জন্যে অনেক সময় লেগেছিল। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সেটা প্রায় আড়াই হাজার বছর।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি :-
পৃথিবীর সমস্ত ভাষাবংশের মধ্যে অন্যতম হল ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষাবংশ। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে বাংলা ভাষা কয়েকটি স্তরের মধ্য দিয়ে ক্রমবিবর্তনের ধারায় রূপান্তরিত হয়েছে।কিভাবে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, মূল আর্য ভাষাভাষী মানুষ আনুমানিক খ্রি:পূ: ২৫০০ অব্দে রাশিয়ার উরাল পর্বতের পাদদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণে মূল আর্য বা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা থেকে নানা প্রান্তে পৃথিবীতে দশটি ভাষা বংশের উদ্ভব হয়।
এই দশটি শাখার অন্যতম একটি হল ইন্দো-ইরানীয়। তা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ইরানীয় আর্য, দরদীয় ও ভারতীয় আর্য ভাষা। প্রাচীন ভারতীয় আর্যের দুটি রূপ প্রচলিত ছিল কথ্যরূপ ও সাহিত্যিক রূপ। বেদ লেখা হয়েছিল সাহিত্যিক ভাষায়।
আর কথ্য রূপের ছিল চারটি আঞ্চলিক উপভাষা। প্রাচ্য, উদীচ্য, মধ্যদেশীয় ও দাক্ষিণাত্য। এই কথ্য উপভাষাগুলি লোকমুখে স্বাভাবিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই সূচনা ঘটল মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার।
আরও পড়ুন :- কথ্য ভাষা কাকে বলে?
প্রাচ্য থেকে প্রাচ্য প্রাকৃত ও প্রাচ্য-মধ্যা প্রাকৃতের জন্ম হল। তারপর প্রাকৃত ভাষা বিবর্তনের দ্বিতীয় স্তরে প্রাচ্য থেকে মাগধী সাহিত্যিক প্রাকৃতের জন্ম হল।
প্রাকৃতের বিবর্তনের তৃতীয় স্তরে সাহিত্যিক প্রাকৃতের কথ্যরূপ থেকে জন্ম হল অপভ্রংশের এবং অপভ্রংশের শেষ স্তরে পাওয়া গেল অবহটঠ।
এর পরে ভারতীয় আর্য ভাষা তৃতীয় যুগে (আ: ৯০০ খ্রী:) পদার্পণ করে। মাগধী অপভ্রংশ-অবহট্ঠ থেকে পাওয়া গেল দুটি শাখা পশ্চিমা ও পূর্বী। তারপর পূর্বী শাখা থেকে জন্ম হল 'বঙ্গ-অসমিয়া’ ও ‘ওড়িয়া' ভাষার। অবশেষে বঙ্গ-অসমিয়া থেকেই সৃষ্টি হল বাংলা ভাষা।
(১) প্রাচীন বাংলা ভাষা
(২) মধ্য বাংলা এবং
(৩) আধুনিক বাংলা
(২) ক্ষতিপূরণ দীর্ঘীভবন _ ধর্ম > ধৰ্ম্ম > ধাম
(৩) বিভক্তির স্থানে অনুসর্গের ব্যবহার _ তোহোর অন্তরে – তোর তরে।
(৪) -এর/-অর/-র' বিভক্তি যোগে সম্বন্ধ পদ। রুখের তেন্তলি কুম্ভিরে খাঅ।
(২) সর্বনামের বহুবচনে কর্তৃকারকে 'রা' বিভক্তি _ আহ্মারা > আমরা।
(৩) অপিনিহিতির ব্যবহার করিয়া > কইরা
প্রাচ্য থেকে প্রাচ্য প্রাকৃত ও প্রাচ্য-মধ্যা প্রাকৃতের জন্ম হল। তারপর প্রাকৃত ভাষা বিবর্তনের দ্বিতীয় স্তরে প্রাচ্য থেকে মাগধী সাহিত্যিক প্রাকৃতের জন্ম হল।
প্রাকৃতের বিবর্তনের তৃতীয় স্তরে সাহিত্যিক প্রাকৃতের কথ্যরূপ থেকে জন্ম হল অপভ্রংশের এবং অপভ্রংশের শেষ স্তরে পাওয়া গেল অবহটঠ।
এর পরে ভারতীয় আর্য ভাষা তৃতীয় যুগে (আ: ৯০০ খ্রী:) পদার্পণ করে। মাগধী অপভ্রংশ-অবহট্ঠ থেকে পাওয়া গেল দুটি শাখা পশ্চিমা ও পূর্বী। তারপর পূর্বী শাখা থেকে জন্ম হল 'বঙ্গ-অসমিয়া’ ও ‘ওড়িয়া' ভাষার। অবশেষে বঙ্গ-অসমিয়া থেকেই সৃষ্টি হল বাংলা ভাষা।
বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ :-
বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের মধ্যে আমারা উপরে বাংলা ভাষার উদ্ভব বা উৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করলাম। এবার আমরা বাংলা ভাষার বিকাশ নিয়ে আলোচনা করব। বাংলা ভাষার বিকাশকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলি -(১) প্রাচীন বাংলা ভাষা
(২) মধ্য বাংলা এবং
(৩) আধুনিক বাংলা
প্রাচীন বাংলা ভাষা :-
এই পর্বের সময়সীমা আনু: ৯৫০-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ। তুর্কি আক্রমণের সময় থেকে (১২০২ খ্রি:) পরবর্তী নিদর্শনহান অংশকে ধরা হয় না। ৯৫০-১২০০ খ্রি: পর্যন্ত ধরা হয়। এই পর্বে প্রাপ্ত নিদর্শন - 'চর্যাপদে', সর্বানন্দ রচিত 'অমরকোষের' টীকায় চার শতাধিক বাংলা প্রতিশব্দে, ধর্মদর্দাসের 'বিদগ্ধ মুখমণ্ডলে', ‘শেকশুভদয়ার’ গানে ছড়ায়।প্রাচীন বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য :-
(১) পদান্তিক স্বরধ্বনির স্থিতি _ ভণতি > ভণই(২) ক্ষতিপূরণ দীর্ঘীভবন _ ধর্ম > ধৰ্ম্ম > ধাম
(৩) বিভক্তির স্থানে অনুসর্গের ব্যবহার _ তোহোর অন্তরে – তোর তরে।
(৪) -এর/-অর/-র' বিভক্তি যোগে সম্বন্ধ পদ। রুখের তেন্তলি কুম্ভিরে খাঅ।
মধ্য বাংলা ভাষা :-
সময়সীমা – ১৩৫০-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ। এর নিদর্শন মেলে বড়ু চণ্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন', বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য, শাক্তসাহিত্য, বৈষ্ণব সাহিত্য, মহাভারত, রামায়ণ, ভাগবতের অনুবাদ ইত্যাদিতে।মধ্য বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য :-
(১) আ - কারের পরবর্তী ই/উ' ধ্বনির ক্ষীণতা _ বড়াঞি > বড়াই।(২) সর্বনামের বহুবচনে কর্তৃকারকে 'রা' বিভক্তি _ আহ্মারা > আমরা।
(৩) অপিনিহিতির ব্যবহার করিয়া > কইরা
(৪) ষষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন ছিল _ 'র. এর' ইত্যাদি। যথা, 'রূপের পাথারে আঁখি ডুবিয়া রহিল।
আধুনিক বাংলা ভাষা :-
সময়কাল ১৭৬০ থেকে বর্তমানকাল। মানুষের মুখের ভাষাই এই পর্বের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তা ছাড়া ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকবৃন্দ থেকে আধুনিক যুগের রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, সমরেশ বসু প্রমুখের বিশাল রচনা সম্ভার এই ভাষার নিদর্শন। এর পাঁচটি উপভাষা রয়েছে – রাটী, বঙ্গালী, কামরূপী, ঝাড়খণ্ডী, বরেন্দী। উল্লেখ্য ভাগীরথী তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের 'রাঢ়ী' উপভাষাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে 'আদর্শ কথ্য বাংলা'।আধুনিক বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য :-
(১) ব্যাপকভাবে 'অভিশ্রুতি' প্রক্রিয়ার ব্যবহার, যেমন _ করিয়া > কইর্যা > করে(২) স্বরসঙ্গতি লক্ষণীয় _ দেশী > দিশি
(৩) বহুপদী ক্রিয়ারূপ দেখা যায় _ গান করা, খেলা করা
(৪) ইংরেজি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি বহু বিদেশি শব্দের ব্যবহার চেয়ার, টেবিল, আলপিন, হাকিম, কুপন ইত্যাদি।
(৫) নতুন নতুন ছন্দোরীতি এবং গদ্যছন্দের ব্যবহার সম্প্রতি ঘটেছে।
আধুনিক বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত দেশের জ্ঞানবিজ্ঞান এদেশে প্রচারিত হচ্ছে। ফলে আধুনিক চিন্তা ভাবনার বাহন হিসেবে বাংলা ভাষা ক্রমেই অধিকতর যোগ্য হয়ে উঠছে। তাছাড়া বাংলা এখন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহারে নিজের যথোপযুক্ততা প্রমাণ করছে এবং প্রয়োজনবোধে বাইরের প্রভাবে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে।
আরও পড়ুন :- আঞ্চলিক ভাষা কি? বিশেষ কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষার উদাহরণ?
বাংলা ভাষার নাম ব্যবহারে যুগে যুগে নানা ধরনের নামকরণ করা হয়েছে। উন্নাসিক ব্রাহ্মণ্য অভিজাতদের কাছে বাংলা ছিল 'ভাষা'। উন্নাসিক মুসলমানদের কাছে ছিল 'হিন্দুয়ানি ভাষা'। কেউ বলেছেন 'প্রাকৃত', কেউ বলেছেন 'লোকভাষা' কারও মতে 'লৌকিক ভাষা'। অধিকাংশ লেখক বলেছেন 'দেশি ভাষা' এবং কিছু সংখ্যক লেখক 'বঙ্গভাষা', 'বাঙ্গালা' বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলার বাইরে এর নাম ছিল 'গৌড়িয়া'। আধুনিক যুগে এ ভাষার নাম 'বাংলা' ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা বিশ্বে চতুর্থস্থানীয় ভাষা।
বাংলা ভাষার নাম ব্যবহারে যুগে যুগে নানা ধরনের নামকরণ করা হয়েছে। উন্নাসিক ব্রাহ্মণ্য অভিজাতদের কাছে বাংলা ছিল 'ভাষা'। উন্নাসিক মুসলমানদের কাছে ছিল 'হিন্দুয়ানি ভাষা'। কেউ বলেছেন 'প্রাকৃত', কেউ বলেছেন 'লোকভাষা' কারও মতে 'লৌকিক ভাষা'। অধিকাংশ লেখক বলেছেন 'দেশি ভাষা' এবং কিছু সংখ্যক লেখক 'বঙ্গভাষা', 'বাঙ্গালা' বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলার বাইরে এর নাম ছিল 'গৌড়িয়া'। আধুনিক যুগে এ ভাষার নাম 'বাংলা' ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা বিশ্বে চতুর্থস্থানীয় ভাষা।
1 মন্তব্যসমূহ
অসাধারণ একটা পোস্ট । ধন্যবাদ আপনাকে
উত্তরমুছুনPlease do not enter any spam link in the comment box.