ধর্মমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে? ধর্ম মঙ্গল কাব্যের ধারা, কাহিনী ও কবিগণ

ধর্মমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে?

কবি ঘনরাম চক্রবর্তী। তাঁর কাব্যের নাম "শ্রীধর্মমঙ্গল"।

ঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য ধর্মমঙ্গল কাব্যের সূত্রপাত হয়েছে।

ধর্মঠাকুরকে কখনও বিষ্ণু, কখনও শিব, কখনও বুদ্ধরূপে প্রচার করা হলেও তিনি অনার্য দেবতা এবং অনার্য ডোমদের দ্বারাই পূজিত।

ডোম পণ্ডিত পূজিত ধর্মঠাকুর একমাত্র রাঢ়ের দেবতা। ধর্মঠাকুরের কোনো মূর্তি নেই। কৃর্মাকৃতি একখণ্ড শিলাই ধর্মঠাকুর। রাঢ়দেশে ধর্মঠাকুর এখনও জাগ্রত দেবতা, এখনও মহাসমারোহে তাঁর পূজা হয়ে থাকে। রাঢ়ের রুক্ষ লাল কাঁকুরে মাটি তার সীমানা- নির্দেশক। ধর্মঠাকুর লৌকিক দেবতা, সম্ভবত অনার্য ধর্মভাবনা থেকে এর উদ্ভব।

ধর্ম মঙ্গল কাব্যে ধর্মঠাকুরের প্রতীক কচ্ছপাকৃতি বিশিষ্ট একটি শিলা। তবে কোথাও কোথাও ডিম্বাকার চতুষ্কোণ শিলাখণ্ড ও ধর্মমূর্তি হিসাবে পূজা পায়। স্থান বিশেষে ধর্মঠাকুর বাঁকুড়া রায়, যাত্রাসিদ্ধি রায়, গরীব রায়, ক্ষুদি রায়, কালু রায়, বৃদ্ধ রায়, জগৎ রায় নামেও পূজা পান।

সুনীতিবাবুর মতে, ধর্ম শব্দটির আদিরূপ হল কোল গোষ্ঠীর কর্মবাচক শব্দ 'দড়ম' বা 'দরম'।

ধর্মমঙ্গল কাব্যের ধারা কাহিনি ও কবিগণ

নীহাররঞ্জন রায় বলেন ‘ধর্মঠাকুর মূলত ছিলেন প্রাক আর্য আদিবাসী ডোমের দেবতা।'

আশুতোষ ভট্টাচার্য রাঢ়ের আদিম অধিবাসী ডোমদের অতি প্রাচীন সূর্য উপাসনার কথা জানিয়েছেন।


অধ্যাপক সেনের মতে, 'জন্মসূত্রে ধর্ম হলেন বৈদিক দেবতা বরুণ।'

ধর্মপূজাবিধানে ধর্মঠাকুর শিব, ও মৃত্যুর দেবতা যমরাজের সঙ্গে মিল আছে।

শূন্য পুরাণের মতে, ধর্মঠাকুরও বিষ্ণুর মতো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী চতুর্ভূজ পুরুষ।

ধর্মমঙ্গল কাব্যকে রাঢ়ের জাতীয় কাব্য বলা হয় কেন?

রাঢ় অঞ্চলের আদিম অধিবাসীদের যোদ্ধা মনোভাব ও অপরাজেয় যুদ্ধ কাহিনী ধর্মমঙ্গলে স্থান পাওয়ায় অনেকে একে ‘রাঢ়ের জাতীয় মহাকাব্য' বলে নির্দেশ করতে চান।

কিন্তু ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এ মতের বিরোধিতা করে বলেছেন ‘মঙ্গলকাব্যে'র কাহিনী ও ভাবরস যেমন সমগ্র জাতির অন্তরে বাইরে অতপ্রোতভাবে মিশে থাকে, ধর্মমঙ্গলের আখ্যানবস্তু ঠিক তেমনি ব্যাপকতার সঙ্গে রাঢ়ের সবশ্রেণীর মানুষের অন্তরের বস্তু হয়ে উঠতে পারেনি।'

ধর্মমঙ্গল কাব্যের বৈশিষ্ট্য :-

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হল:

• এটি একটি ধর্মগ্রন্থ। এতে বৈষ্ণব ধর্মের প্রচার-প্রসার এবং তার মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে।

• কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ এতে চৈতন্য মহাপ্রভুর উপাসনা পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন।

• ভাষা ও শৈলী অত্যন্ত সহজ, সুন্দর ও আকর্ষণীয়। কবির মাধুর্যময় ভাষাভান্ডারের প্রশংসা করা গেছে।

• আলোচিত বিষয়ের সাথে প্রযোজ্য রসাভিধানের সমন্বয়। শৃঙ্গার, হাস্য, করুণ প্রভৃতি রস ব্যবহার করেছেন।

• বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন ধারা চালু করেছে - ধর্মগ্রন্থ রচনার দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।

• ধর্ম, সংস্কৃতি ও সাহিত্য - এই তিনটিই উপলব্ধি করিয়েছে।

সংক্ষেপে, ধর্মমঙ্গল কাব্য বাংলা সাহিত্যে একটি সুনাম গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। এর বৈশিষ্ট্যগুলো একে অনন্য করে তুলেছে।

ধর্মমঙ্গল কাব্যের সমাজচিত্র :-

ধর্মমঙ্গল কাব্যে কৃষ্ণদাস কবিরাজ তৎকালীন সমাজের একটি বিস্তৃত চিত্রণ উপস্থাপন করেছেন। তিনি শুধু ধর্মীয় বিষয়কেই তুলে ধরেননি, বরং সামাজিক জীবন, রীতি-নীতি, প্রথা-পরম্পরা, মানসিকতা ইত্যাদিও তুলে ধরেছেন।

কাব্যে দেখা যায়, সমাজে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, বৈষণব ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা ছিল। এছাড়াও দারিদ্র, ধ্বংসপ্রবণ দুরাচার, প্রকৃতি দোষে মানুষের প্রতি নিষ্ঠুরতা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি সমাজের এই ভুল দিকগুলো সমালোচনা করেছেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।

সামাজিক জীবনের সাধারণ লোকেরাই কবিতায় অনেক ক্ষেত্রে কথোপকথন বা আলাপের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। এরমধ্যে গ্রাম-গঞ্জের দারিদ্র্য, নারী নিপীড়ন ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনা করেছেন কবি।

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনি :-

ধর্মমঙ্গল কাব্যের দুটি কাহিনি
১ - হরিশ্চন্দ্রের কাহিনি এবং
২ - লাউ সেনের কাহিনি।

এর মধ্যেলাউসেনের কাহিনীকাব্যে অধিকতর প্রাধান্য পেয়েছে।

১ - ধর্মমঙ্গল কাব্যে হরিশ্চন্দ্রের কাহিনি :-

রাজা হরিশ্চন্দ্র ও তাঁর রানী মদনা নিঃসন্তান ছিলেন বলে লজ্জায় লোকের কাছে মুখ দেখাতে পারছিলেন না। মনের দুঃখে তাঁরা ঘুরতে ঘুরতে বলুকা নদীর তীরে এসে দেখলেন সেখানে ভক্তেরা ধর্মের পূজা করছে।

রাজারানীও ধর্মের পূজা করে তাঁর কাছে পুত্রবর প্রার্থনা করলেন। ধর্ম তাঁদের পুত্রলাভের বর দিলেন। পুত্রটিকে যথা সময়ে ধর্মের কাছে বলি দিতে হবে। রাজা পুত্রের মুখ দেখার আশায় তাতেই রাজি হলেন।

পুত্র জন্মালে তার নাম রাখা হল লুইচন্দ্র বা লুইধর। একসময় রাজারানী প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে গেলেন। একদিন ব্রাহ্মণের বেশে ধর্মঠাকুর উপস্থিত হয়ে রাজপুত্রের মাংস ভক্ষণের আকাঙ্ক্ষা জানালেন।

রাজারানী প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করে পুত্রের দেহ কেটে রান্না করলেন। এতে ধর্মঠাকুর সন্তুষ্ট হয়ে নিজ মূর্তি ধারণ করে রাজপুত্রকে ফিরিয়ে দিলেন। রাজা মহাসমারোহে ধর্মের পূজা করলেন।

২ - ধর্মমঙ্গল কাব্যে লাউসেনের কাহিনী :-

গৌড়েশ্বরের একজন সামন্তের নাম কর্ণসেন। ইছাই ঘোষ নামে জনৈক সামন্তের আক্রমণে কর্ণসেনের ছয় পুত্র মারা যায়। বৃদ্ধ বয়সে সকল পুত্রের মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েন।

গৌড়েশ্বর কর্ণসেনকে সংসারে আবদ্ধ রাখার জন্য নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেন। গৌড়েশ্বরের শ্যালক মহামদ তা পছন্দ করে নি। সে বৃদ্ধ ভগ্নিপতি কর্ণসেনকে আঁটকুড়ে বলে উপহাস করে।

আরও পডুন :- মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনি ও ধারা

রঞ্জাবতী এ গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ধর্মঠাকুরের কাছে পুত্রবর চেয়ে কঠোর ব্রত পালন করে। ধর্মের আশীর্বাদে এক পুত্র হল। তার নাম লাউসেন।

মহামদ এ সংবাদে রাগান্বিত হয়ে ভাগ্নেকে হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ধর্মঠাকুরের দয়ায় সে প্রতিবারই বেঁচে যায়। যুবক লাউসেনের বীরত্বের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মহামদের কুপরামর্শে গৌড়েশ্বর তাকে নানা দুরূহ কাজে নিয়োজিত করেন। ধর্মের আশীর্বাদে সকল কাজেই সে সাফল্য অর্জন করতে থাকে।

লাউসেন প্রতিবেশী রাজাদের পরাজিত করে তাঁদের মেয়েকে বিয়ে করে। এক সময় লাউসেনের অনুপস্থিতির সুযোগে মহামদ তার রাজ্য আক্রমণ করে, কিন্তু সে লাউসেনের স্ত্রীর কাছে পরাজিত হয়।

মহামদ গৌড়েশ্বরকে প্ররোচিত করাতে পশ্চিম দিকে সূর্যোদয় করানোর জন্য লাউসেন গৌড়েশ্বর কর্তৃক নির্দেশিত হল। ধর্মের দয়ায় লাউসেন তাতেও সাফল্য অর্জন করল। ফলে চারদিকে তার গৌরবের কথা ছড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে দুষ্কর্মের শাস্তিস্বরূপ মহামদের কুষ্ঠ ব্যাধি হয়। লাউসেনের অনুরোধে ধর্মঠাকুর তাকে কুষ্ঠ থেকে আরোগ্য করে দিল। এ ভাবে ধর্মঠাকুরের মহিমা প্রচারিত হয়। লাউসেনও সুখে রাজত্ব করে যথাসময়ে স্বর্গে চলে গেল।

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কবিগণ :-

ময়ূর ভট্ট :-

মানিকরাম গাঙ্গুলি ও ঘনরাম চক্রবর্তী তাঁদের রচিত ধর্মমঙ্গলে ময়ূরভট্টকে ধর্মমঙ্গল কাব্যধারার ‘আদিকবি' বলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন।

ময়ূর ভট্টের গ্রন্থটির নাম 'শ্রী ধর্মপুরাণ'। ময়ূর ভট্টের ব্যক্তিপরিচয় আজও অজ্ঞাত। সংস্কৃত সাহিত্যে ঐ নামে এক কবি আছেন যিনি ‘সূর্যশতক’ লিখেছিলেন। তিনি ছিলেন কুষ্ঠরোগগ্রস্ত। সূর্যের বন্দনা লিখে রোগ থেকে তিনি মুক্ত হন বলে কথিত। অনেকে মনে করেন সূর্যশতকের লেখক ময়ূর ভট্টই বাংলায় প্রথম ধর্মমঙ্গল কাব্য লেখেন, যে ধর্মঠাকুর কুষ্ঠরোগ নিরাময় করেন।

রূপরাম চক্রবর্তী :-

সপ্তদশ শতকে ধর্মমঙ্গল কাব্যধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি রূপরাম চক্রবর্তীর আবির্ভাব। কবি তার কাব্যের নাম দিয়েছেন 'অনাদ্যমঙ্গল'। তাঁর জন্ম বর্ধমান জেলার দক্ষিণে কাইতি শ্রীরামপুরে।

তাঁর আগে যাঁরা ধর্মঠাকুরের পালা গান লিখেছেন, সেগুলি ছিল পাঁচালি ও ব্রতকথা ধরনের। রূপরামই প্রথম সেই কাহিনীকে মঙ্গলকাব্যের রূপ দিতে সক্ষম হলেন।

কবির কাব্যে লাউ সেন পালা ও হরিশচন্দ্র পালা দুটি আখ্যান পাওয়া যায়। গৌড়রাজকে নিতান্তই মেরুদণ্ড হীন করে দেখিয়েছেন রূপরাম, অন্যদিকে মহামদ দুরন্ত।

রামদাস আদক :-

‘অনাদি-মঙ্গল' নামক কাব্যের রচয়িতা রামদাস আদক জাতিতে ছিলেন কৈবর্ত। হুগলি জেলায় তাঁর বাসস্থান। কবি সতের শতকের প্রথমভাগে বর্তমান ছিলেন। রামদাস আদকের অনাদিমঙ্গল ১৬৬২ খ্রীঃ রচিত হয়।

কবি দৈবনির্দেশে কাব্য রচনা করেছিলেন বলে উল্লেখিত হয়েছে । ব্রাহ্মণবেশী ধর্মঠাকুর আবির্ভূত হয়ে কাব্য রচনার জন্য আদেশ দিলেন :

"আজি হৈতে রামদাস কবিবর তুমি।

জাড়গ্রামে কালু রায় ধর্ম হই আমি।"

সীতারাম দাস :-

ধর্মমঙ্গল কাব্যের ধারা যখন একটি নিয়মিত সাহিত্য প্রবাহে পরিণত হয়ে গেছে, সেইকালে এই শাখার একজন সাধারণ মানের কবি হিসাবে সীতারাম দাসের আবির্ভাব।

সীতারামের পিতা দেবীদাস ছিলেন বর্ধমানের সুখসায়রের অধিবাসী। সীতারামের জননী কেশবতীর পিত্রালয় বাঁকুড়ার ইন্দাস। কবির জন্ম বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস গ্রামে।


সীতারামের রচনা সরল, অলঙ্কারহীন এবং কবিত্ববর্জিত। সীতারাম তাঁর গৃহদেবতা গজলক্ষ্মীর কৃপায় বনমধ্যে সন্ন্যাসীবেশী ধর্মঠাকুরের সাক্ষাৎ পান। তিনি আদেশ করেন :

"প্রভু বলে নিরঞ্জন নৈরাকার আমি।

আমার মঙ্গলগীত কর গিয়া তুমি।।"

যাদুনাথ :-

যাদুনাথের কাব্যের নাম ‘ধর্মপুরাণ'। তাঁর কাব্যে হরিশচন্দ্র মদনা- লুইচন্দ্ৰ কেন্দ্রিক উপাখ্যানটিকে নিয়েই কাব্য রচনা করেছেন। কাব্যটি ধর্মঠাকুর কেন্দ্রিক হলেও এতে বৈষ্ণব ও শাক্তমতের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছে। সন্ন্যাসীর অনুরোধ রক্ষার্থে পিতামাতার মিলিতভাবে নৃশংসভাবে সন্তানকে হত্যা করার কাহিনী বর্ণনায় কবি যথেষ্ট কারুণ্যের সৃষ্টি করেছেন।

ঘনরাম চক্রবর্তী :-

আঠারো শতকে বর্ধমান জেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে কবি ঘনরাম চক্রবর্তীর জন্ম হয়। ঘনরাম চক্রবর্তী ধর্মমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি। কবির পিতার নাম গৌরীকান্ত ও মাতা সীতাদেবী।

ঘনরামের কাব্য ১৭১১ খ্রীঃ রচিত হয়। তাঁর কাব্যের নাম 'শ্রীধর্মমঙ্গল'। বর্ধমানরাজ কীর্তিচন্দ্রের রাজত্বকালে তিনি কাব্যটি রচনা করেছিলেন।

তিনি লাউসেন ও হরিশচন্দ্র দুটি আখ্যানকে কাব্যরূপ দেন। কেবল আয়তনগত বিশালতা নয়, চরিত্রসৃষ্টি এবং উপস্থাপনা কৌশলের গুণে ঘনরাম তাঁর রচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

কাব্যটিতে দৈব প্রাধান্যের বদলে মানবচরিত্রের প্রাধান্য আছে। সন্তানহীনা রানী রঞ্জাবতীর কৃচ্ছসাধনা এবং লাউসেনের অদ্ভুত বীরত্ব কাহিনী খুব নজর টানে। কলিঙ্গা, কানড়া, লখাই প্রমুখ নারীরা বীরাঙ্গনা নারীতে পরিণত হয়েছে। ঘনরামের গুরু তাঁকে ‘কবিরত্ন' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

মাণিকরাম গাঙ্গুলী :-

হুগলী জেলার আরামবাগ মহকুমার বেলডিহা গ্রামে মাণিকরামের জন্ম। তাঁর পিতার নাম গদাধর ও মাতা কাত্যায়নী।

মানিকরাম তাঁর কাব্যের নাম দিয়েছিলেন 'শ্রীধর্মমঙ্গল'। গ্রন্থের আরো একটি নাম 'বার্মাতি'। বারমতি অর্থাৎ বারোদিনে সমাপ্য কোন গীতিমুখর কাব্য। চরিত্র-চিত্রনে দু-একটি স্থানে সামান্য অভিনবত্ব আছে। কালুডোমের দারিদ্র্যলাঞ্ছিত জীবনটি কবির কলমে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

এই কাব্যটি ১৩১২ বঙ্গাব্দে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও দীনেশচন্দ্র সেনের যুগ্ম সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়।

উপরোক্ত কবিগণের বাইরে আরো অনেক কবি ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনায় অগ্রসর হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে হৃদয়রাম সাউ, সহদেব চক্রবর্ত্তী, নরসিংহ বসু, রামচন্দ্র বাঁড়ুয্যা, রামকান্ত রায়, প্রভুরাম মুখুয্যে, দ্বিজ ক্ষেত্রনাথ, গোবিন্দরাম বন্দ্যোপাধ্যায়, নিধিরাম গাঙ্গুলী, রামনারায়ণ, কবিচন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী উল্লেখযোগ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ