বাগধারা কাকে বলে বা কি :-
বাগধারা বাংলা ভাষার একটি বিশিষ্ট সম্পদ। একাধিক নির্দিষ্টপদ ধরা-বাঁধা ক্রমে বাক্যে প্রযুক্ত হয়ে সাধারণ অর্থের চেয়েও অতিরিক্ত বিশেষ কোনও অর্থ প্রকাশ করে এবং এর সঙ্গে অভিধানে প্রদত্ত অর্থের কোনও সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। এই ধরনের পদ প্রয়োগে ইঙ্গিতপূর্ণ সুস্থ অর্থ এবং বক্তব্য বিশেষভাবে প্রকাশ পায়। এই ধরনের পদের প্রয়োগে বক্তব্য বিষয় সংক্ষিপ্ত অথচ রসক হয়ে ওঠে। প্রত্যেক ভাষাতেই ভাব প্রকাশের জন্য এই রকমের বাগধারা আছে।অর্থাৎ বাগধারা কাকে বলে(bagdhara kake bole) তা বলতে বোঝায়, এক বা একাধিক শব্দ যখন বিশিষ্ট একটি অর্থে ব্যবহার করা হয় তখন তাকে বাগধারা বলা হয়।
আরও পড়ুন :- ধাঁধা কি? মজার কিছু ধাঁধা প্রশ্ন উত্তর সহ।
আমরা উপরে বাগধারা কাকে বলে বা কি? সে সম্পর্কে জানলাম এবার বিভিন্ন রকম বাগধারার অর্থ কি সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।
বাগধারা ও প্রবাদের মধ্যে মূল পার্থক্য কী ?
বাগধারা এবং প্রবাদের মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য রয়েছে:১. উৎপত্তি:
বাগধারার উৎপত্তি হয়েছে কবিদের রচিত কবিতা, গান, গীতিকাব্য থেকে। আর প্রবাদের উৎপত্তি জনমুখের মাঝে থেকেই হয়েছে।
২. বিষয়বস্তু:
বাগধারার বিষয়বস্তু হলো সাহিত্যিক এবং কলামূলক। আর প্রবাদের বিষয়বস্তু জীবনোপদেশ ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক।
৩. আকার:
বাগধারা বড়, বিস্তৃত এবং বিশদ। আর প্রবাদ সাধারণত ছোট এবং সংক্ষিপ্ত।
৪. উদ্দেশ্য:
বাগধারার উদ্দেশ্য হলো কবিতা রচনা করা। আর প্রবাদের উদ্দেশ্য জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা প্রদান করা।
৫. প্রয়োগ:
বাগধারা বেশিরভাগ কবিতা ও সাহিত্যে প্রয়োগ করা হয়। আর প্রবাদ সাধারণত কথোপকথন এবং পরামর্শ দেওয়ার সময় ব্যবহৃত হয়।
এই রকম কিছু প্রধান পার্থক্য রয়েছে বাগধারা ও প্রবাদের মধ্যে।
বাগধারা কীভাবে সনাক্ত করা যায়?
বাগধারা সনাতন করার কিছু উপায় নিম্নে দেয়া হল:১. বাগধারা সাধারণত কবিতা, গান, গীতিকাব্য, কাব্য ইত্যাদির মধ্যে থাকে। সেই হিসাবে একটি উক্তি যদি কোন কবিতা/কাব্য/গানের অংশ হয়, তাহলে সেটিকে বাগধারা বলা যায়।
২. বাগধারার বিষয়বস্তু সাধারণত সাহিত্যিক, কলামূলক ও ভাবুকতাময় হয়। এমন কোন উক্তির ক্ষেত্রে বাগধারা বলা যেতে পারে।
৩. বাগধারা সাধারণত বড় আকারের ও বিশদ হয়। কোন উক্তি যদি বিশদ ও বড় আকারের হয়, তাহলে তাকে বাগধারা বলা যেতে পারে।
৪. রচয়িতা যদি কোন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী অথবা সাহিত্যিক হন, তাহলেও তাঁর রচিত উক্তিকে বাগধারা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
৫. উক্তিটির ভাষাগত দক্ষতা এবং সৌন্দর্যের উপর নজর দেয়া। বাগধারার এই দুটি বৈশিষ্ট্য থাকে সাধারণত।
বাগধারার অর্থ কি এবং ব্যাখ্যা :-
ঢাকের কাঠি, সোনায় সোহাগা, চক্ষুদান, রাবণের চিতা বাগধারার অর্থ কি? এমন কিছু বাংলা বাগধারার কিছু প্রয়োগ নীচে দেখানো হচ্ছে।অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী (অল্পবিদ্যার গর্ব) : অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী বলেই ফটিক মিয়া শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক কারো সমালোচনাই বাদ দেয় না।।
অন্ধকারে ঢিল ছোড়া (না জেনে কিছু করা) : বিষয়টি আগে ভাগ করে জেনে নাও, অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার দরকার কি।
অকাল কুষ্মাণ্ড (অপদার্থ) : এত সুযোগ পেয়েও তুই জীবনে কিছুই করতে পারলি না, একে বারে অকাল কুয়ান্ড।
অকুল পাথার (মহা বিপদ) : হঠাৎ করে এর বাবার মৃত্যুতে সাধন অকুল পাথারে পড়ে গেল।
অন্ধের যষ্টি (একমাত্র অবলম্বন): একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর নাতিটিই বিপিনবাবুর অন্ধের যষ্টি হয়েছে।
অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন) : এই কৃপণ বুড়োর কাছে টাকা চাওয়া আর অরণ্যে রোদন একই কথা।
অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া)- চোরটা দুদিনের জ্বরেই অক্কা পেয়েছে।
অগস্ত্য যাত্রা (চির দিনের জন্য প্রস্থান) : বাবা-মার বকুনি খেয়ে ছেলেটা সেই যে বাড়ি থেকে পালাল, আর বিশ্ব – কে জানত এই হবে তার অগস্ত্য যাত্রা।
অগাধ জলের মাছ (চতুর ব্যক্তি) : সে তো অগাধ জলের মাছ, তার মনের ফন্দি-ফিকির বুঝবে কি করে?
আরও পড়ুন :- মজার কিছু প্রবাদ বাক্যের তালিকা
অন্ধকারে ঢিল ছোড়া (না জেনে কিছু করা) : বিষয়টি আগে ভাগ করে জেনে নাও, অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার দরকার কি।
অকাল কুষ্মাণ্ড (অপদার্থ) : এত সুযোগ পেয়েও তুই জীবনে কিছুই করতে পারলি না, একে বারে অকাল কুয়ান্ড।
অকুল পাথার (মহা বিপদ) : হঠাৎ করে এর বাবার মৃত্যুতে সাধন অকুল পাথারে পড়ে গেল।
অন্ধের যষ্টি (একমাত্র অবলম্বন): একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর নাতিটিই বিপিনবাবুর অন্ধের যষ্টি হয়েছে।
অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন) : এই কৃপণ বুড়োর কাছে টাকা চাওয়া আর অরণ্যে রোদন একই কথা।
অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া)- চোরটা দুদিনের জ্বরেই অক্কা পেয়েছে।
অগস্ত্য যাত্রা (চির দিনের জন্য প্রস্থান) : বাবা-মার বকুনি খেয়ে ছেলেটা সেই যে বাড়ি থেকে পালাল, আর বিশ্ব – কে জানত এই হবে তার অগস্ত্য যাত্রা।
অগাধ জলের মাছ (চতুর ব্যক্তি) : সে তো অগাধ জলের মাছ, তার মনের ফন্দি-ফিকির বুঝবে কি করে?
আরও পড়ুন :- মজার কিছু প্রবাদ বাক্যের তালিকা
অর্ধচন্দ্র দান (গলাধাক্কা) : বেয়াদব লোকটাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে মালিশ থেকে বিদায় করে দাও।
অমাবস্যার চাঁদ ( দুর্লভ দর্শন) : কি হে! তুমি যে একেবারে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেছ, তোমার দেখাই পাওয়া যায় না।
অহি-নকুল সম্বন্ধ (ঘোর শত্রুতা) : বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তি নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে এখন অহি-নকুল সম্বন্ধ।
অগ্নি পরীক্ষা (চরম পরীক্ষা) : জাতীয় জীবনে এ এক অগ্নি পরীক্ষা - এতে আমাদের উত্তীর্ণ হতেই হবে।
আকাশ ভেঙে পড়া (ভীষণ বিপদে পড়া) : চাকুরি হারিয়ে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
আকাশ কুসুম (অবাস্তব কল্পনা) : লটারির টাকা পেয়ে তোমার বাড়ি তৈরি করার চিন্তা আকাশ কুসুম কল্পনা বই আর কিছু নয়।
আদায়-কাচকলায় (শত্রুতা) : দুভারের সম্পর্ক আদায়-কাচকলায়, কেউ কারো মুখ পর্যন্ত দেখে না।
আক্কেল সেলামী (বোকামির জন্য লোকসান) : খোঁজ খবর না নিয়ে অচেনা লোকটির জামিন হয়ে এখন এক হাজার টাকা আক্কেল সেলামী দিতে হল।
আঠার মাসে বছর (দৗর্ঘসূতী) : তার আঠার মাসে বছর কোনো কাজই সে সময়মত করতে পারে না।
আক্কেল গুড়ুম (হতবুদ্ধি ) : তোমার কথা শুনেই আমার আক্কেল গুড়ুম, আর কিছু শুনতে চাই না।
আষাঢ়ে গল্প (অসম্ভব কাহিনী) : তুমি খালি হাতে বাঘ মেরেছ এএটা আষাঢ়ে গল্প ছাড়া কিছুই নয়।
আদা জল খেয়ে লাগা (উদ্যম সহকারে কাজ করা ) : পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে, এখন থেকেই আদা জল খেয়ে লেগে পড়।
আমড়া কাঠের ঢেকি (অপদার্থ) : সে একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি তাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে লাভ নেই।
আমতা আমতা করা (দ্বিধা করা) : সাক্ষী উকিলের জেরার মুখে আমতা আমতা করতে লাগল।
আমড়াগাছি (তোষামোদ) : বড়বাবুকে আমড়াগাছি করে কোনও লাভ হবে না।
আঙুল ফুলে কলাগাছ (হঠাৎ বড়লোক হওয়া) : কাঁচামালের ব্যবসা করে এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।
আলালের ঘরের দুলাল (অতি আদরে নাই পুত্র) : রোদ-বাতাস সইতে পারে না, পরিশ্রম করতে পারে না এমন আলালের ঘরের দুলালের হাতে আমার ব্যবসার কাজকর্ম ছেড়ে দিতে পারি না।
ইঁচড়ে পাকা ( অকালপাকা) : মোহনবাবুর ছেলেটি ভীষণ ইঁচড়ে পাকা হয়েছে, বড়দের মুখে মুখে কথা বলে।
ইতর বিশেষ (পার্থক্য) : ছেলে-মেয়ের মধ্যে ইতর বিশেষ না করে দুজনেরই লেখাপড়ার সমান সুযোগ দাও
উত্তম মধ্যম (প্রহার) : পুলিশে দিয়ে কি হবে, চোরটিকে উত্তম মধ্যম দিয়ে গাঁ থেকে বের করে দাও।
উলুবনে মুক্তো ছড়ানো (অপাত্রে উৎকৃষ্টদান) : চোরকে সদুপদেশ দেওয়া তো উলুবনে মুক্তো ছড়ানো।
এক চোখা (পক্ষপাতিত্ব) : গাঁয়ের মোড়ল একচোখা, তার কাছে সুবিচার পাবে কি করে?
এলাহি কাও (বিরাট আয়োজন) : ছেলের জন্মদিনে এতবড় আয়োজন এ যে এক এলাহি কাজ।
কড়ায় গন্ডায় (পুরোপুরি) : আগে কড়ায় গান্ডায় পাওনা বুঝিয়ে দাও তারপরে তোমার অন্য কথা।
কলুর বলদ (একটানা খাটুনি) : সারাদিন সংসারে কলুর বলদের মতো খেটে মরছি তবু কেউ দুটো ভাল কথা বলে না।
কত ধানে কত চাল (কঠিন বাস্তব অভিজ্ঞতা) : এখন সংসারের চাপ কাঁধে পড়েছে, এখন বুঝতে পারবে কত ধানে কত চাল।
কথার কথা (আসল কথা নয়) : এটা শুধু একটা কথার কথা বললাম, আসলে ওইসব কিছুই নয়।
কান পাতলা (যে সবার কথা বিনা বিচারে বিশ্বাস করে) : আমাদের বড়সাহেব খুব কান পাতলা লোক, যে যাই বলে তাই বিশ্বাস করেন।
কাঁচা পয়সা (নগদ টাকা) : কি রে! কিছু কাঁচা পয়সা পেয়ে মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করছিস না।
আরও পড়ুন :- লোককথার তালিকা সমূহ
কাঠের পুতুল (নির্জীব) : ওই কাঠের পুতুল দিয়ে কিছু হবে না, এত ব্যবসা চালাতে হলে চটপটে বুদ্ধিমান ছেলে দরকার।
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে (একটি কষ্টের উপর আরও কষ্ট) : এমনিতেই এবার ব্যবসাতে অনেক টাকা লোকসান হল, তার উপরে বাড়িতে বাড়িতে চুরি হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছি একেই বলে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে।
কালেভদ্রে (কদাচিৎ) : ওর সঙ্গে আমার কালে ভদ্রে দেখা হয়।
কেঁচে গণ্ডূষ (নতুন ভাবে শুরু করা) : ছোটোবেলায় ভালো করে পড়াশোনা না করাতে, এখন ছেলেকে পড়াতে গিয়ে দেখছি কেঁচে গণ্ডূষ না করলে আর উপায় নেই।
কেতাদুরস্ত (পরিপাটি) : করিম পোশাকে কেতাদুরস্ত হলে কি হবে লেখাপড়া তো কিছুই জানে না।
খানচাল (হিসাব করে চলা) – তোমাকে তো উপার্জন করে সংসার চালাতে হয় না আমি উপার্জন করে সংসার চালছি তাই জানি কত ধানে কত চাল।
খয়ের খাঁ ( তোষামোদকারী): স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়েও আমাদের দেশের একদল লোক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইংরেজের খয়ের খাঁ ছিল।
গড্ডালিকা প্রবাহ (অন্ধ অনুসরণ) : আজকাল অধিকাংশ লোকই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে চলেছে।
গলগ্রহ (পরের বোঝা স্বরূপ) : আমি কারো গলগ্রহ নই, গায়ে খেটে নিজের অন্ন জোগাড় করি।
গোবর গণেশ (অকর্মণ্য) : মদনটা একেবারে গোবর গণেশ, ওকে দিয়ে কোনও কাজই হয় না।
গোকুলের ষাঁড় (নিষ্কর্মা ভবঘুরে) : উপেন্দ্রবাবু এত বড় একজন নামকরা লোক আর ওঁর ছোট ছেলেটা যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ায়, একেবারে গোকুলের ষাঁড় বনে যাচ্ছে।
গোবরে পদ্মফুল (সমাজের নিচু তলায় জাত মহৎ ব্যক্তি ) : যেমন মতিবাবু তেমনি তার ছেলেরা সবাই উচ্ছৃঙ্খল কিন্তু ছোট ছেলেটি যেমন ভদ্র তেমনি সং, একেবারে গোবরে পদ্মফুল।
গো-বেচারা (নিরীহ) : ও একেবারেই গো-বেচারা, কারো সাতেও নেই, পাঁচেও নেই।
গোড়ায় গলদ (আরম্ভে ভুল) : অঙ্ক মিলবে কি করে, গোড়াতেই যে গলদ করে বসে আছ।
গোঁয়ার-গোবিন্দ (কাণ্ডজ্ঞানশূন্য): তোমার মতো গোঁয়ার-গোবিন্দ লোক তো আমি দেখিনি বাপু।
গোঁফ খেজুরে (অলস) : সে যা গোঁফ খেজুরে লোক, ঢাকনা খুলে হাঁড়ির ভাতটুকু নিয়েও খেতে পারবে না।
গুড়ে বালি (নিষ্ফল আশা) : ভেবেছো জ্যাঠামশায়ের সম্পত্তি পেয়ে দুহাতে ওড়াবে, সে গুড়ে বালি।
ঘুণাক্ষরে (অতি সামান্য অংশে) : সাবধান এ কথা কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারে।
ঘোড়া রোগ (সাধ্যের অতিরিক্ত করা) : দুবেলা ভাত জোটে না, এদিকে প্রতি রাতে সিনেমা দেখার শখ এ ঘোড়া রোগ ছাড়া আর কি।
চক্ষুদান (চুরি করা) : রাস্তায় পকেটমার আমার মোবাইলটি চক্ষুদান করে নিল।
চিনির বলদ (ভারবাহী কিন্তু লাভের অংশীদার নয়) : সংসারে দিনরাত খেটে মরছি কিন্তু চিনির বলদের মতো লাভের লাভ কিছুই পাই না।
চুনোপুঁটি (সামান্য ব্যক্তি) : উনি আজকাল বড় হয়ে গেছেন, আমাদের মতো চুনোপুঁটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না।
চোখের বালি (চক্ষুশূল) : ছেলেটা সৎমায়ের চোখের বালি দিনরাত গালিই শোনে।
চোখের মাথা খাওয়া (অসাবধানতাবশত না দেখা) : তুমি কি চোখের মাধ্য খেয়েছ, সামনেই পড়ে আছে জিনিষটা অথচ তুমি দেখতেই পাচ্ছ না।
ছকড়া নকড়া (সস্তা দর) : বাজারে ইলিশ মাছের আমদানি বেশি, তাই ছকড়া নকড়া দরে বিক্রি হচ্ছে।
ছাই চাপা আগুন (প্রচ্ছন্ন প্রতিভা) : তার ভিতরে যে এত প্রতিভা আছে তা আগে বোঝা যায়নি, এখন দেখছি এ যে ছাই চাপা আগুন।
ছেলের হাতের মোয়া (সহজলভ্য বস্তু) : একি ছেলের হাতের মোয়া যে চাইলেই পাবে, ভাল ফলাফল করতে চাইলে পরিশ্রম করে অনেক বেশি পড়তে হবে।
ছাই ফেলতে ভাঙা ফুলো (ঝামেলার কাজের জন্যে নগণ্য ব্যক্তিকে ডাকা) : আমি তো ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো, যে কাজ কেউ করতে চায় না সেই কাজ করার জন্যেই তো আমার ডাক পড়ে।
জিলিপির প্যাচ (কুটিলতা) : ওর কথা বিশ্বাস করো না, বাইরে ওকে ভাল মানুষের মতো দেখালেও পেটের ভিতরে ওর জিলিপির প্যাচ।
জগা-পিচুড়ি (বিচিত্র জিনিষের সংমিশ্রণ) : সব কিছু ওলট-পালট করে একেবারে জগা-খিচুড়ি করে রেখেছ, একটু গুছিয়ে রাখতে পারতে।
ঝাড়া হাত-পা (যার কোনো কিছু নেই) : তোমার তো কোনও দায়-দায়িত্ব নেই, একেবারে ঝাড়া হাত-পা।
ঝড় ঝাপটা (বাধাবিঘ্ন) : জীবনে উন্নতি করতে গেলে অনেক রকম ঋড় ঝাপটাই সহ্য করতে হয়।
টনক নড়া (চৈতন্য লাভ করা) – একবার ফেল করে ওর টনক নড়েছে, এবার বছরের শুরুতেই লেখাপড়া আরম্ভ করেছে।
টিমে তেতালা (খুব ধীর গতি) : আরে এত ঢিমে-তেতালা হলে কি চলে।
টাকার কুমির (অনেক টাকার মালিক) : এত সাদাসিধে দেখলে কি হবে পুলকবাবু একজন টাকার কুমির
ঠোঁট কাটা (স্পষ্ট বক্তা) : ঠোঁট কাটা লোকটিকে সঙ্গে নিয়ে যাও, দরকার মত দুকথা শুনিয়ে আসতে পারবে।
ডান হাতের ব্যাপার (খাওয়া দাওয়া) : ডানহাতের ব্যাপারটা আগে চুকিয়ে নিন, তারপর আবার কাজে লাগা যাবে।
ডুমুরের ফুল (দুর্লভ দর্শন) : একেবারে ডুমুরের ফুল হয়ে উঠেছ দেখছি, আজকাল দেখাই পাওয়া যায় না।
ঢাকের কাঠি (তোষামোদ) : লোকটি কমলার নামে সেই যে ঢাকের কাঠি বাজিয়েই চলেছে, শেষ আর করে না।
তাসের ঘর (ক্ষণস্থায়ী) : ওদের মধ্যে এত দহরম মহরম কিন্তু সামান্য স্বার্থের টানাপোেড়নেই বন্ধুত্ব তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল।
তীর্থের কাক (প্রত্যাশী ব্যক্তি) : সেই সকাল থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে আছে কেন?
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠা (ভীষণ রেগে যাওয়া) : পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েছি। দেখলে বাবা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবেন।
দাঁত ফোটানো (বুঝে ওঠা) : এবারের পরীক্ষায় যে প্রশ্ন হয়েছে তাতে দাঁত ফোটানো দায়।
দহরম মহরম (ঘনিষ্ঠতা) : বড় সাহেবের সঙ্গে তোমার যে দহরম মহরম সহজেই তুমি কাজটা তার কাছ থেকে বাগিয়ে নিতে পারবে।
দেহ রাখা (মারা যাওয়া): আমার দাদু কাশীতেই দেহ রাখলেন।
ধনুক ভাঙ্গা পণ (কঠিন প্রতিজ্ঞা): সে এবার ধনুক ভাঙ্গা পণ করেছে যে পরীক্ষায় পাশ না করা অবধি আর ফুটবল ছোঁবে না।
ধরাকে সরা জ্ঞান (অহঙ্কারে সবাইকে অবজ্ঞা করা) : হঠাৎ করে কিছু কাঁচা পয়সা পেয়ে শৈলেনবাবু ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।
ধামা ধরা (খোসামদকারী) : ব্রিটিশ সরকার তাঁদের ধামা ধরা লোকদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করতেন।
নয় ছয় (অপচয়) : দুদিনেই ছেলেটা পৈতৃক সম্পত্তি নয় ছয় করে উড়িয়ে দিল।
নখদর্পণে (ভালভাবে জানা) : কোলকাতায় কোথায় কি পাওয়া যায় এ কিছুই অশোক বাবুর নখদর্পণে।
ননীর পুতুল (কষ্ট সহ্য করতে অক্ষম) : শঙ্করী যেন একেবারে ননীর পুতুল, এইটুকু রাস্তা হেঁটেই ও পায়ের ব্যথায় নড়তে চড়তে পারছে না।
পটল তোলা (মারা যাওয়া) : জনতার হাতে বেদম মার খেয়ে চোরটা গতরাতে পটল তুলেছে।
পায়া ভারী (উঁচুপদের জন্য গর্ব) প্রমোশন পেয়েই ফনীন্দ্রবাবুর পায়া ভারী হয়েছে, একেবোরে ধরাকে সরাজ্ঞান করছে।
পরকাল ঝরঝরে (ভবিষ্যৎ নষ্ট) : এখন থেকে ভাল করে পড়াশোনা নইলে কিন্তু পরকাল ঝরঝরে বলে দিচ্ছি।
পাকা ধানে মই দেওয়া (সর্বনাশ করা) : আমি যে তোমার কী পাকা ধানে মই দিয়েছি বুঝতে পারছি না, তুমি আমার পেছনে লেগেছ কেন?
বকধার্মিক বা বিড়াল তপস্বী (ভন্ড): মুখে হরি হরি বললে কি হবে, আসলে উনি একজন বকধার্মিক (বা বিড়াল তপস্বী)
বিনা মেঘে বজ্রপাত (হঠাৎ বিপদ বা অশুভ ঘটনা) : একমাত্র ছেলের অকস্মাৎ মৃত্যুর খবরে বিমানবাবুর মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল।
বাঘের দুধ (সহজপ্রাপ্য নয় এমন বস্তু) : টাকায় কিনা পাওয়া যায়, চাইলে বাঘের দুধও পাওয়া যায়।
বুকের পাটা (সাহস) : মুকুলের বুকের পাটা আছে বলতে হবে, নইলে মুখের সামনে বড়কর্তাকে দুকথা শুনিয়ে দিল।
ভুতের বেগার (পন্ডশ্রম) : যে কাজে তোমার কোন লাভ নেই, সে কাজে কেন যে মিছামিছি ভূতের বেগার খাটছো বুঝতে পারছি না।
মিছরির ছুরি (মুখে মধু অন্তরে বিষ) – ওর কথায় যত মধুই থাক ও মিছরির ছুরি, অন্তরে তার কথা বিধে যায়।
মাটির মানুষ (নিরীহ) : আমাদের স্কুলের পণ্ডিত মশাই একজন মাটির মানুষ ছিলেন, আমরা কত উপদ্রব করেছি কিন্তু তিনি সব হাসি মুখে সহ্য করতেন।
মগের মুল্লুক (অরাজক দেশ) : একি মগের মুল্লুক পেয়েছ যা খুশি তাই করবে।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলা (কঠোর পরিশ্রম করা) : মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কোন রকমে সংসারটাকে একটু দাঁড় করেছি অথচ ছোট ভাইটি আমার কোন কথাই কানে তোলে না।
রুই কাতলা (পদস্থ ব্যক্তি ) : তিনি সমাজের একজন রুই-কাতলা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে কি রক্ষা পাওয়া যাবে?
রাবণের চিতা (চির অশান্তি) : কালু বিয়ে করার পর যেন পরিবারটাতে রাবণের চিতা শুরু হয়েছে।
শিবরাত্রির সলতে (একমাত্র বংশধর) : পর পর দুটো ছেলের মৃত্যুর পর জননী কোলের এই শিব রাত্রির সলতেটি নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন।
শাঁখের করাত (উভয় সঙ্কট) : কারখানায় গেলে ইউনিয়নের নেতারা ধরবেন না গেলেও বড়বাবু রক্ষা রাখবেন না, একেবারে শাঁখের করাতে পড়েছি।
সাত-পাঁচ (নানা প্রকার): সাত-পাঁচ ভেবে আমি চন্দনকে আর একথাটা জানালাম না।
সোনায় সোহাগা (শুভ সংযোগ) : অমল পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়েছে আবার ওদিকে লটারীতেও একলক্ষ টাকা পেয়েছে এযেন সোনার সোহাগা।
হাটে হাঁড়ি ভাঙা (গোপন কথা প্রকাশ করা) : আমাকে রাগিও না বলছি, একেবারে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো।
হাত টান (চুরির অভ্যাস) : টাকা পয়সা সাবধানে রাখ চাকরটার হাত টানের অভ্যাস আছে।
হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা (উপস্থিত সুযোগ ত্যাগ করা) : তুমি যে হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলে দিলে, এই জন্য কিন্তু তোমাকে পস্তাতে হবে, বলে দিলাম।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.