পড়াশোনা সম্পর্কিত কিছু কথা :-
পড়াশোনা করে কি হবে আমাদের? :-
আমাদের জীবনের এবং সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল পড়াশোনা। কিন্তু আপনি কি কখনো বিচার করেছেন, পড়াশোনা করে আমাদের কি হবে? পড়াশোনা করলে আমাদের কী লাভ হবে? আচ্ছা আপনাকে যদি কেউ এই প্রশ্ন গুলো করে তাহলে আপনার উত্তর কী হবে?
আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের জীবনে প্রতিটি কাজের পেছনে একটি আশার বীজ বপন করি। আর এই সব স্বপ্ন বা আশাই হয়তো আমাদের এরকম (এই কাজ করে কি হবে) প্রশ্নের সম্মুখীন করে। ঠিক এই রকম একটি প্রশ্ন পড়াশোনা করে আমাদের কি হবে?
এমন অনেক জনপ্রিয় মানুষ রয়েছেন যারা খুব কম পড়াশোনা করেও অনেক উঁচু স্থান অধিকার করে আছে। কেননা তারা এই পড়াশোনা করার নেশা মত্ত হয়ে কাজ করে গেছেন।
আমাদের এই পড়াশোনা কি শুধুই একটি চাকরি পাওয়ার জন্য ? হ্যাঁ অবশ্যই আপনিও ভালো ভাবে পড়লে চাকরি নিশ্চিত পাবেন। কিন্তু এই পড়াশোনা করা কেবল চাকরি পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।
কেননা সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে, অন্যদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে চলার জন্য, নিজেকে এক উচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পড়াশোনা একটি অন্যতম মাধ্যম।
এছাড়াও আমরা যে কোন্ বই পড়ি না কেন, তা কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিজ্ঞতার দ্বারাই লেখা। সুতরাং আমরা যখন সেই বিষয়টি পড়ছি, তখন আমার অভিজ্ঞতা ও সেই লেখকের অভিজ্ঞতা একত্রিত হয়ে আমি এক নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করছি, যা পড়াশোনার মাধ্যমেই সম্ভব।
আপনারা তো ইলন মাস্ক এর নাম নিশ্চই শুনেছেন। ইলন মাস্ক স্পেস-এক্স এর মতো বিশাল কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত করেছেন কেবল বই পড়েই।
এক দিনে চব্বিশ ঘণ্টা এটা তো আমরা সবাই জানি । কিন্তু সত্যি বিশ্বাস করূন এই চব্বিশ ঘণ্টা কিন্তু অল্প সময় নয়, অনেকটা সময়। এর মধ্যে যদি আমরা তিন থেকে চার ঘণ্টা একটু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করি তো জীবনে অনেক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু না, এটা না করে পড়াশোনা না করলে কি হয়? এই প্রশ্নই আমাদের ঘিরে ফেলে।
আমরা প্রত্যেকেই পড়াশোনা করি একেক কারণে। কেউ পড়াশোনা করে জ্ঞান বৃদ্ধি পাবার জন্য, কেউ পড়াশোনা করে শুধু ডিগ্রি লাভ করার উদ্দেশ্যে, আবার কেউ ভালো চাকরি পাওয়ার আশায় পড়াশোনা করে। তবে সত্যিই পড়াশোনার আসল উদ্দেশ্য কী বা কেন পড়াশোনা করা উচিত চলো ছোট্ট করে জেনে নেই সে সম্পর্কে।
১ - চিন্তা বা কল্পনা শক্তির বৃদ্ধি ঘটাতে :-
পড়াশোনা আমাদের মধ্যে নতুন একটা কিছু শেখায় । কিছু জানার মাধ্যমে বা শেখার মাধ্যমে তুমি নতুন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে আরম্ভ করবে, কল্পনা করতে আরম্ভ করবে। এর মাধ্যমে তুমি আসলে একটা বিষয়কে বিভিন্ন দিক থেকে, বিভিন্ন পদ্ধতিতে দেখতে শিখবে, বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শিখবে।
আচ্ছা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এত এত সব গান, কবিতা, উপন্যাস এসব কিছুই তো চিন্তা বা কল্পনা শক্তির ফল তাই না। নাকি মুখস্থ বিদ্যা বা অন্য কিছু? তাছাড়া বিজ্ঞানের এত এত আবিষ্কার এসব কিছুই তো চিন্তা বা কল্পনা শক্তির উপর তৈরি তাই না।
নিজের উন্নতির জন্য :-
বর্তমান অবস্থানের চেয়ে তুমি যদি নিজেকে ভালো অবস্থানে নিতে চাও তাহলে পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই। নিজের ভবিষ্যৎ কে সুন্দর করতে হলে, নিজের জীবনকে সুন্দর করতে তুলতে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সে বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা থাকা লাগে। আর নিজেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে নেয়ার জন্য, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার জন্যও পড়াশোনা করাটা খুবই জরুরি।
স্মার্ট হবার জন্য :-
একজন মানুষের স্মার্টনেস প্রকাশ পায় তার কথা-বার্তায়, শিক্ষায় এবং আচরণে। যতো বেশি তুমি পড়াশোনা করবে তোমার কথা-বার্তা, শব্দভাণ্ডার, জ্ঞান তত বাড়বে।
বিনোদন লাভের জন্য :-
বিনোদন লাভের জন্য পড়াশোনা করার কথা বলা, এটা বর্তমান সময়ে বেশি যুক্তিযুক্ত হবে না। কেননা বর্তমানে মানুষকে বিনোদনের জন্য এমন সব উপায় বের হয়েছে যেখানে সময় যে কোন দিকদিয়ে কেটে যায় তা বোঝাই যায় না। তবে এখন অনেক মানুষের কাছে পড়াশোনা বিনোদনের জন্য কিংবা অবসর সময় পার করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
পড়াশোনা মনে রাখার উপায় :-
আমরা অনেকেই আছি যারা অনেক পড়াশোনা করি কিন্তু মনে রাখতে পারি না। এই সমস্যা অনেকের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। আসলে সঠিক কৌশল প্রয়োগ করে না পড়লে পড়া ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশি থাকে। তো চলুন পড়া সহজে মনে রাখার কিছু কৌশল নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক।
তার আগে আমি একটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গল্প বলতে চাই। এক ছাত্র তার শিক্ষককে বললেন আমি যেহেতু পড়াশোনা মনে রাখতে পারি না তো আমি পড়াশোনা ছেড়েই দিবো। এতে শিক্ষক বললেন ঠিক আছে কিন্তু তার আগে তুমি একটা কাজ করো। মিড-ডে-মিল রান্না করে যে, সেই ঘরে কয়লার ঝুড়িটি আছে সেটি ভর্তি করে জল নিয়ে আসো। প্রথম বার ভর্তি করে সে জল নিয়ে আসতে সব জল ঝুড়ির ফাঁকা দিয়ে পড়ে গেলো এবং শিক্ষকের কাছে এসে বলল যে সব জল পড়ে গেছে। এতে শিক্ষক বললেন কোনো ব্যাপার না আবার নিয়ে এসো এভাবে চার বার করার পর শিক্ষক বললেন, তুমি ঝুড়িতে করে জল আনতে পারোনি ঠিকই কিন্তু সেই কয়লা মাখানো নোংরা ঝুড়িটি অবশ্যই পরিষ্কার করেছো। আমাদের মনও একই রকম এর মধ্যে অনেক মলিনতা রয়েছে, তার জন্য আমারা কোনো বিষয়কে মনে রাখতে পারি না। কিন্তু প্রতিনিয়ত করে গেলে ঠিক তা মনে থাকবে।
১ - হালকা ব্যায়াম করা :-
আমরা প্রত্যেকেই জানি ব্যায়াম স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক তেমনি পড়াশোনার আগে হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং ধারণক্ষমতা দুটোই বৃদ্ধি পায়। আর পড়াও সহজে মনে রাখা যায়। কিছুটা হাঁটাচলা করা অথবা যোগ ব্যায়াম এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এতে পড়াশুনার প্রতি যেমন আমাদের মনযোগ বাড়বে এবং তা মনেও থাকবে দীর্ঘ সময়।
২ - উৎসাহ নিয়ে পড়তে বসা :-
তুমি যখন খেলতে বা বেড়াতে যাও তখন যেমন আগ্রহ ও জেতার আসা নিয়ে থাকো, তেমনি পড়ার সময়ও নিজের ভিতর থেকে উৎসাহ তৈরি করতে হবে। এই বিষয়টি খুবই কঠিন, পড়া মনে থাকে না কেন, বুঝতে পারছি না কেন? এসব পূর্বধারণা থেকে বেরিয়ে খালি মাথা নিয়ে বসতে হবে। পড়াশুনাটা শুধুই তোমার কাছে কঠিন নয়, আমাদের প্রত্যেকের কাছেই কমবেশি কঠিন বিষয়। আর এ কঠিন বিষয়টিকে যদি সহজ ভাবে মনে রাখার উপযোগী করে তুলতে হয় তাহলে আগ্রহ ও উৎসাহ থাকাটা আবশ্যক। কেননা যে কাজে উৎসাহ ও আগ্রহ থাকবে না সে কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন হয় না।
৩ - খন্ড খন্ড করে পড়া :-
পড়া মনে রাখার ভালো একটি কৌশল হলো, একটি প্যারাগ্রাফের কিছু ছোট ছোট খন্ড করে পড়া।
৪ - বিভিন্ন রংয়ের মার্কারের ব্যবহার :-
অনেকে পড়ার সময় বিভিন্ন রংয়ের মার্কার ব্যবহার করে এটা বেশ কার্যকর। ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও এর কিছু স্বেচ্ছাসেবক ২০১৬ সালে শিক্ষার্থীদের উপর এক গবেষনায় দেখেছেন, যারা পড়ার সময় বিভিন্ন রংয়ের মার্কারের ব্যবহার করে তাদের পড়া মনে রাখার হার অন্যদের থেকে তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। পাশাপাশি এর উপর ব্রেনের ভিজ্যুয়াল এফেক্ট বেড়ে যায়। ফলে মনে রাখতে সুবিধা হয়।
৫ - পড়াগুলো রিভাইজ করা :-
একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমরা আজকে সারাদিন যত কিছু পড়ি শুনি জানি বা দেখি তা পাঁচ দিন পর চার ভাগের তিন ভাগই ভুলে যাই। আজকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়ে আগামীকাল ঘুমানোর আগে সেই পড়া রিভাইজ দেয়া। তারপর এক সপ্তাহ পর পুনরায় রিভাইজ দিলে তা দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় :-
পড়াশোনায় মন বসানোর উপায় স্বরূপ একটি কাজ খুবই জরুরি। পড়ার ঠিক আগের মূহূর্তে একটু ধ্যানে বসবেন। আমাদের মন খুবই চঞ্চল, নানা রকম ঘটনা আমাদের মনকে নাড়া দিয়ে যায়। এর জন্য পড়ার আগে মনকে স্থির করা খুবই জরুরি।
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার জন্য বা মনকে স্থির করা জন্য, তুমি এই কাজটি করতে পারো, খুবই উপকারী।
চোখ বন্ধ করে সোজা হয়ে বসে ভাববে, তুমি এখন স্কুলে যাবে, এর জন্য তৈরি হচ্ছো, এবং সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোলে, রাস্তা দিয়ে যেতে একটি দোকান পড়লো। তার পর একটি বড়ো টারনিং পার করে তোমার বন্ধুদের দেখা পেলে। রাস্তার পাশে কত বড় বড় গাছ, এভাবে যেতে যেতে ১০:৫০ বাজে, খুব কম সময় স্কুলে যেতে হবে। তোমার বন্ধুদের বললে তারাতারি যেতে। এর মধ্যে তোমার সাইকেলের চেন পড়ে গেলো, তা সারানোর জন্য তোমার বন্ধুদের সাহায্য নিলেন এবং সর্বশেষে ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছে গেলে।
খুব ছোট একটি কাজ যা করলে তোমার মন একদম শান্ত ও স্থির হয়ে যাবে। এবং পড়াশোনায় মনোযোগ আনা খুবই সহজ হবে। এই কাজটি পড়ার আগে অবশ্যই করবেন।
পড়াশোনা করার নিয়ম :-
তুমি কখনো কি ভেবেছো পড়াশোনার নিয়ম এর ব্যাপারে? বা কি ভাবে সহজেই নিয়মমাফিক পড়াশোনা করা যায়?
সঠিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করার নিয়ম স্বরূপ বলা যায় একটি পড়াশোনার রুটিন তৈরি করা।
আচ্ছা তুমি দিনে পাঁচ টি রুটি 🍞 খেতে পাও কিন্তু সেখানে যদি তোমাকে ১০টি রুটি 🍞 খেতে দেওয়া হয় তাহলে তোমার অবস্থা কি হবে, ভেবে দেখেছেন?
অনেকে আমরা ঠিক এমন কাজ করি পরীক্ষার আগে। যা আমাদের জন্য খুবই বাজে একটা অভ্যাস।
এর জন্য একটি নির্দিষ্ট পড়াশোনা করার রুটিন তৈরি করতে পড়তে হবে প্রথম থেকেই।
রুটিনে শুধুমাত্র তোমারই সাবজেক্ট ও পড়ার সময় থাকবে, অন্য কিছু কিন্তু নয়। অনেকেই রুটিনে খাওয়া, গোসল, বিশ্রাম ইত্যাদি বিষয় যোগ করে। তারপরে ঠিকমত তা পালন করতে না পেরে হতাশ হয়ে যায়। কোন দরকার নাই এসবের। শুধু যতটুকু পড়ার সময় ততটুকু রুটিনে যোগ করে নাও।
পড়ার রুটিন বানানো সহজ কিন্তু সেটা মানাটাই কঠিন। তবে যদি তুমি একটু মনোযোগী হও তবে এটা কোন ব্যাপারি না।
বাচ্চাদের পড়াশোনা :-
তবে এখনও আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিবার রয়েছে যেখানে মা-বাবা দের শিক্ষা খুবই কম। আর এর জন্য তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে পড়তে বসতে ভয় পান। কিন্তু সত্যি বিশ্বাস করুন আপনার সন্তানের প্রথম শিক্ষক তার বা মা। আজ কাল আধুনিক প্রযুক্তি এতটাই উন্নত যে শিশুদের পড়ালেখার জন্য নানা রকম অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হয়েছে।
প্লে স্টোর থেকে পড়াশোনা নিয়ে মজার কবিতা বা পড়াশোনা নিয়ে উক্তি বাচ্চাদের শোনাতে পারেন। পড়াশোনার টিপস সম্পর্কিত কিছু তথ্য জেনে নিন। আর
সেই সব পদ্ধতিতে আপনি আপনার বাচ্চাদের প্রাথমিক পড়াশোনা খুব সহজেই চালিয়ে যেতে পারেন।
পড়াশোনা bangla meaning and english meaning :-
পড়াশোনা অর্থ স্বরূপ আমরা বলতে পারি পাঠাভ্যাস, অধ্যয়ন ও বিদ্যা। তেমনি পড়াশোনা english meaning - study, reading, schooling.
পড়াশোনা কে আবিষ্কার করেন :-
আপনি পড়াশোনা করছেন আর পড়াশোনা কে আবিষ্কার করেন? এরকম প্রশ্ন আপনার মনে জাগেনি এমনটা তো হতেই পারে না।
তবে সত্যি করে বলতে এমন কোনো মানুষের নাম পাওয়া যায়নি, যিনি পড়াশোনা কে আবিষ্কার করেন। হ্যাঁ এটি অবশ্যই মানুষের দ্বারাই সৃষ্টি, তবে অনেক সময় ধরে, বিভিন্ন পদ্ধতিতে। তবে আপনি যদি আস্তিক হন তবে ধরে নিতে পারেন এটি ঈশ্বর বা আল্লাহ্ বা ভগবান সৃষ্টি করেছেন।
তবে আপনার কি মত "পড়াশোনা কে আবিষ্কার করেন" তা নীচে কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
1 মন্তব্যসমূহ
Hmm thik
উত্তরমুছুনPlease do not enter any spam link in the comment box.